শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এক ছাতার নিচে আসছে মাধ্যমিকের উপবৃত্তি

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:৩২ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ বুধবার

এক ছাতার নিচে আসছে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব উপবৃত্তি কার্যক্রম। উপবৃত্তি বণ্টনে জটিলতা এড়ানো এবং উপকারভোগী শিক্ষার্থীদের সমান হারে অর্থ দেয়াসহ কয়েকটি কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে একটি খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, বৃত্তি সুবিধা সবাইকে সমানভাবে দেয়া প্রয়োজন। নতুবা এর মূল উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব নয়।

 

তিনি বলেন, মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের বৃত্তির হারে বৈষম্য রয়েছে। এসব বৈষম্য নিসরণ একীভূত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে এসডিজি-৪ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। আগামী বছর থেকে এ কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রস্তাবিত নীতিমালায় উপবৃত্তির একটি সমন্বিত হার তুলে ধরা হয়েছে। সে অনুযায়ী ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ২৫০ টাকা, টিউশন ফি মাসিক ৩৫ ও ইউনিফর্ম বাবদ ১ হাজার টাকা (এককালীন) করে বার্ষিক মোট ৪ হাজার ৪২০ টাকা, ৭ম শ্রেণিতে বার্ষিক ৪ হাজার ৪২০, ৮ম শ্রেণিতে ৫ হাজার ২০, ৯ম শ্রেণিতে ৬ হাজার ৪০০, ১০ শ্রেণিতে ৭ হাজার ৪০০, একাদশে (বিজ্ঞান) ৯ হাজার ৪৬০, অন্যান্য বিষয়ে ৮ হাজার ৭৮০ এবং দ্বাদশ শ্রেণি (বিজ্ঞান) ৯ হাজার ৪৬০ ও অন্যান্য বিভাগের জন্য ৮ হাজার ৯৮০ টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একাদশের বই কিনতে বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ১ হাজার ৫০০ এবং অন্যান্য বিভাগের জন্য ১ হাজার টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া ২০২৮ সাল পর্যন্ত বর্তমান হারের ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত উপবৃত্তি ৩২৫ থেকে ৬৫০, টিউশন ফি মাসিক ৪৫ থেকে ১০০ এবং ইউনিফরমের জন্য এককালীন ১ হাজার ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। এসডিজি-৪ বাস্তবায়নে ২০২৮ সালের পরে সর্বনিম্ন ৭ হাজার ৩০০ থেকে ১৫ হাজার ৭৪০ টাকা করারও প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমানে উপবৃত্তির ক্ষেত্রে কোনো একক হার নেই। দেখা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থীর সেসিপ, সেকায়েপ ও এসিএসপির আওতায় একই শ্রেণিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা ব্যবধান রয়েছে। পাশাপাশি তিন প্রকল্প থেকে পরীক্ষার ফি বাবদ ৭৫০ টাকা দিলেও এইচএসএসপি প্রকল্প থেকে পরীক্ষার ফি বাবদ বিজ্ঞানে ৯০০ ও অন্যান্য বিভাগে ৬০০ টাকা দেয়া হচ্ছে। ফলে এক প্রকল্পের সঙ্গে অন্য প্রকল্পের উপবৃত্তির ব্যাপক অমিল রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, সাভার উপজেলার একজন দরিদ্র শিক্ষার্থী ৮ম শ্রেণিতে পাচ্ছে ১৬০ টাকা, সেখানে পাশের উপজেলা হরিরামপুরে একই শ্রেণির শিক্ষার্থী পাচ্ছে ১২০ টাকা। গৌরনদী উপজেলায় পাচ্ছে ১২৫ টাকা। এছাড়াও ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাবদ ১৫ টাকা, ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে ২০ ও একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৫০ টাকা দেয়া হয়।

বর্তমানে সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহোসমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ) বিশ্বব্যাংক ও সরকারি খাতে পরিচালিত। এর আওতায় ২৫০ উপজেলায় ১১ হাজার ৮৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮ জন, সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) আওতায় ৫৪ উপজেলায় ২ হাজার ৯২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন লাখ, মাধ্যমিক শিক্ষা উপবৃত্তি, ২য় পর্যায় প্রকল্প (এসইএসপি) ১৮৩টি উপজেলায় ১৩ হাজার ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১১ লাখ ৭ হাজার ৪৯ এবং উচ্চ মাধ্যমিক উপবৃত্তি প্রকল্প (এইচএসএসপি) ৪৭৯টি উপজেলায় ও ৪টি মেট্রো এলাকার ৬ হাজার ৯৯৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫২ হাজার ১৫৬ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে।

এই চার প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৫ সালে মোট উপকারভোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ১ হাজার ৭০৫ জন। এর মধ্যে ৩২ শতাংশ ছাত্র এবং ৬৮ শতাংশ ছাত্রীকে পৃথকভাবে বৃত্তি দেয়া হয়েছে। এভাবে উপবৃত্তি দেয়ায় এক প্রকল্পের সঙ্গে অন্য প্রকল্পের উপকারভোগীর মানদণ্ডগত অমিল লক্ষ্য করা গেছে।

সমন্বিত উপবৃত্তিতে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দরিদ্র শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়ার কথা বলা হলেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ, প্রতিবন্ধী ও বিলুপ্ত ছিটমহলের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শতভাগ উপবৃত্তি দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সব প্রকল্পের উদ্দেশ্য দরিদ্র শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখা, ঝরে পড়া রোধের জন্য দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়। সমাজে সুবিধাবঞ্চিত, অতি দরিদ্র ও বিদ্যালয়বিমুখ ও প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের কাছে মাধ্যমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণকে আকর্ষণীয় করে তোলা এবং মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে সবার জন্য সমতাভিত্তিক শিক্ষা বাস্তবায়নে উপবৃত্তি চালু করা হয়।

উপবৃত্তি কার্যক্রম একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে সারাদেশে অভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হবে। উপবৃত্তিধারী নির্বাচন, উপবৃত্তির শর্ত, হার, ব্যবস্থাপনা, উপবৃত্তি বিতরণ প্রক্রিয়া, বাজেট ও অর্থ ছাড়, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ইত্যাদি একক ও অভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হবে। শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার পর উপবৃত্তিভোগী নির্বাচনে শ্রেণি শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে শ্রেণিকক্ষে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা আবেদন ফরম পূরণ করবে। স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষা প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে গঠিত একাধিক কমিটি পূরণকৃত আবেদনগুলো বাছাই করে অনলাইনে তথ্য প্রক্রিয়ার জন্য প্রেরণ করবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপবৃত্তিধারী নির্বাচন চূড়ান্ত করা হবে।

চলমান চারটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় উপবৃত্তির সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া ভিন্ন হওয়া, শ্রেণিওয়ারী উপবৃত্তির পরিমাণ ভিন্ন হওয়া ইত্যাদি কারণে অভিন্ন ব্যবস্থাপনায় সারাদেশে সমতাভিত্তিক সমন্বিত উপবৃত্তি কার্যক্রম ২০১৮ সালের মধ্যে চালু করার বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে। সমন্বিত উপবৃত্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বর্তমানে সক্রিয় বিবেচনাধীন, যা এসডিজি-৪ সামগ্রিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। এই কর্মসূচিতে দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপবৃত্তি সুবিধার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া গত আড়াই দশকে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উপবৃত্তি একটি কার্যকর ও পরীক্ষিত কর্মসূচি হিসেবে প্রমাণিত।

মাধ্যমিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণে আগ্রহ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের লেখাপড়াকে অবৈতনিক করার সরকারি ঘোষণার বাস্তবায়ন শুরু হয়। সে অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের বেতন দিতে হতো না। সরকার ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিভিত্তিক সব ছাত্রীর বিপরীতে বার্ষিক চিউশন ফি’র টাকা একসঙ্গে (সরকারি নির্ধারিত) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তহবিলে প্রদান করতো। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের বেতনের বেসরকারি অংশের জোগানে এই অর্থ ব্যয় করতেন। মেয়েদের উপবৃত্তি কার্যক্রম চালুর পর ১০৯৮-১৯৯৬ সালের মধ্যে ওই কর্মসূচি উপবৃত্তির সঙ্গে একীভূত হয়।