তবু তিনি আসবেন সিনেমায়, হাসবেন ও হাসাবেন
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:২২ পিএম, ১৯ মার্চ ২০১৯ মঙ্গলবার
তার উপস্থিতি মানেই ছিলো দর্শকের জন্য বাড়তি উন্মাদনা। তিনি অভিনয় করতেন না, অভিনয় তার মধ্যে বসতবাড়ি বানিয়েছিলো। মুখের অঙ্গভঙ্গি, সংলাপ, হাঁটাচলা- সবকিছুতেই ছিলো হাস্যরসের ছড়াছড়ি। তিনি সদ্য প্রয়াত অভিনেতা চিন্ময় রায়।
ছিলেন মঞ্চের অভিনেতা। সেই সুবাদে কলকাতায় সাদাকালো সিনেমার যুগে তার অভিনয়ে আগমন। উত্তমকুমার থেকে সৌমিত্র; সেই সময়ের সব নায়কদের সঙ্গেই তার সিনেমা রয়েছে। সবার সঙ্গেই তিনি ছিলেন সাবলীল ও স্বতন্ত্র।
তপন সিংহের ‘গল্প হলেও সত্যি’ সিনেমা দিয়ে শুরু করেন সিনেমার অভিনয় জীবন। এরপর ‘মৌচাক’, ‘হাটেবাজারে’, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’, ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’র মতো অসংখ্য কালজয়ী ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন।
সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় চরিত্র ‘টেনিদা’। সেই চরিত্রে অভিনয় করেও তুমুল প্রশংসা পেয়েছেন চিন্ময় রায়। তবে সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবিতে তিনি মুন্সিয়ানার পরিচয় দেন।
তার কমেডিতে ‘আলগা ভাড়ামো’ ছিলো না এখনকার যুগের কমেডিয়ানদের মতো। তিনি সহজাত কৌতুকে দর্শক মাতিয়ে দিতেন। তিনি হাসলে সারা শরীর দুলে উঠতো তার, দুলে উঠতো যেন পুরো সিনেমার গল্পটাই। ক্যামেরার সামনে তিনি ছিলেন এক মুগ্ধ জাদুকর।
বার্ধক্য তাকে থামিয়ে দিয়েছিলো। অনেকদিন ছিলেন না অভিনয়ে। প্রায় সময়ই অসুস্থতায় ভুগতেন। তবে সব কিছুই থেমে গেল চিরতরে। নন্দিত এই অভিনেতা রোববার রাত ১০টার দিকে পশ্চিমবঙ্গের সল্টলেকে নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
জানা গেছে, স্ত্রীর মৃত্যুর পর নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন চিন্ময় রায়। বছর খানেক আগে নিজের ফ্ল্যাটের সামনে থেকে তাকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তার পায়ে ও মাথায় গুরুতর চোট লাগে। সেই থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন।
চিন্ময় রায়ের মৃত্যুতে শোক নেমেছে কলকাতার সিনেমা পাড়ায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জানিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, রঞ্জিত মল্লিকসহ টালিগঞ্জের নানা অঙ্গনের তারকারা।
তবে অভিযোগ উঠেছে মৃত্যুর পর এই অভিনেতাকে শেষ দেখা দেখতে আসেননি তেমন কোনো তারকা। দুই একজন পুরনো সহকর্মীকে পাশে পেলেও চিন্ময় রায়ের শেষ যাত্রায় দেখা যায়নি বর্তমান ইন্ডাস্ট্রির কোনো তারকাকে।
জানা গেছে, গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হয় এই অভিনেতার দেহ। সেখান থেকে ১টা নাগাদ নন্দনে পৌঁছায় মরদেহ। তারপর কেওড়াতলা মহাশশ্মানে শেষকৃত্য সম্মন্ন হয় চিন্ময় রায়ের। সমাপ্তি হলো কলকাতার সিনেমায় কৌতুকের নন্দিত এক অধ্যায়ের।
কলকাতার সিনেমার স্বর্ণালী যুগের মানুষ চিন্ময় রায়। বিশেষ করে যে সময়ে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুপ কুমার, রবি ঘোষ, জহর রায়, তুলসী চক্রবর্তী, সন্তোষ দত্তরা সিনেমায় হাজির হতেন কমেডি নিয়ে সে সময়ের মজবুত একটি স্তম্ভ ছিলেন চিন্ময় রায়।
অল্প যে ক’জন সেই যুগের সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছেন তাদের তালিকা থেকে তার নামটি মুছে গেল। তবে একজন তুখোড়-জাঁদরেল অভিনেতা চিন্ময় রায়ের নাম বাংলা সিনেমার দর্শকের অন্তরে চিরদিনই থেকে যাবে।
বহুমাত্রিক চরিত্রে করে যাওয়া চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি বারবার পর্দায় আসবেন; হাসবেন, এবং হাসাবেনও।