ডন’এ সমালোচিত, মুক্তিতে আলোচিত এক কারিনার গল্প
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১১:০৯ এএম, ২২ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার
মাত্র এক যুগ আগের কথা। ২০০৭ সালের অক্টোবর মাস। ওই সময় মুক্তি পায় কাপুর পরিবারের ছোট মেয়ে কারিনা কাপুর অভিনীত ছবি ‘জাব উই মেট’। এই সিনেমাটির পরিচালনায় ছিলেন ইমতিয়াজ আলী। ছবিটি মুক্তির সময় ক্যারিয়ারের সাতটি বছর কাটান কারিনা। অর্থাৎ তারো সাত বছর আগে বলিউড সিনেমায় আবির্ভাব ঘটে তার। তখনো তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। দর্শক থেকে সমালোচক সবার কাছেই তখন কারিনা ছিলেন আলোচিত, তবুও ব্যবসায়িক সফলতা যেন ডুমুরের ফুল।
২০০৭ সালে তিনি এক সিনেমায় সফলতা পান তো, পরের সিনেমায় পান ফ্লপের স্বাদ। এর মধ্যে প্রেমিক শহীদ কাপুরের সঙ্গে জুটিও ভেঙে যায় কারিনার। এর ঠিক আগের বছর ‘ওমকারা’র জন্য প্রশংসা পেলেও ‘ডন’ সিনেমার আইটেম গানে অংশ নিয়ে হয়েছিলেন প্রচুর সমালোচিত। অনেকেই বলেছিলেন সিনেমাটি চলবে না, কারিনা থাকায় হলে দর্শক যাবে না। তবে মুক্তির পর পুরো বদলে যায় প্রেক্ষাপট।
বছরের অন্যতম ব্যবসায়িক ভাবে সফল হয় সে সিনেমা। ভালোবাসার সিনেমা হিসেবেও জায়গা করে নেয় সেটি। তবে ছবিটি বেশি ভিন্নমাত্রা পেয়েছে নায়িকার জন্য। ‘ম্যায় আপনি ফেভারিট হু’খ্যাত প্রানোচ্ছল ‘গীত’ চরিত্রে কারিনা এতটাই ভালো অভিনয় করেছিলেন যে, দর্শক থেকে সমালোচক সবার মন জয় করেছিলেন।
এই একটা সিনেমা দিয়েই বছর শেষে কারিনা পেয়েছিলেন সেরা নায়িকার খেতাব। এখনো তার নাম নিলে সবার আগে এই সিনেমার নামই স্মৃতিতে ভেসে আসে, সঙ্গে শ্রেয়া ঘোষালের কন্ঠে ‘ইয়েহি ইশক হ্যায়’র মত জনপ্রিয় গানতো আছেই।
কারিনা কিংবদন্তি অভিনেতা ও নির্মাতা রাজ কাপুরের ছেলে রনধীর কাপুরের ছোট কন্যা। তার বড় বোন কারিশমা কাপুরের পথ ধরে তিনিও এসেছিলেন চলচ্চিত্রে। ২০০০ সালে প্রখ্যাত নির্মাতা জে.পি.দত্তের ‘রিফিউজি’ সিনেমার দিয়ে তার অভিষেক। প্রথম সিনেমা ব্যবসায়িক ভাবে সফল হয়নি। তবে প্রশংসিত হয়েছিলেন, পেয়েছিলেন ফিল্মফেয়ার সেরা নবাগতার পুরস্কার।
সবচেয়ে আলোচিত তথ্য হলো অভিষেকের পরের বছরেই মুক্তি পেয়েছিল কারিনার পাঁচটি সিনেমা। বছরের শুরুতেই আনকোড়া তুষার কাপুরকে নিয়ে ‘মুঝে কুছ ক্যাহনা হ্যায়’র মত সুপার হিট সিনেমা উপহার দিলেন তিনি। সবাই ভাবলেন বলিউডে আসলো আরেক সফল নায়িকা। কিন্তু এরপর ‘ইঁয়াদে’, ‘আজনাবি’, ‘অশোকা’ -পরপর তিন সিনেমা ফ্লপ। সেই বছরের দিওয়ালিতে মুক্তি পায় তারকাবহুল সিনেমা ‘কাভি খুশি কাভি গাম’।
আর এর মাধ্যমে প্রথমবারের মত কারিনা পেয়েছিলেন ব্লকব্লাষ্টারের স্বাদ। অনেক তারকার ভিড়ে এই সিনেমায় তিনিও নায়িকা। অভিনয়ের জন্য এই সিনেমা তার ক্যারিয়ারে উল্লেখ করার মত না, তবে ‘বোলে চুড়িয়া’ বা ‘ইউ আর মাই সোনিয়া’র মত সাড়া জাগানোর গানের নায়িকা হবার জন্য এই সিনেমাটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছিল।
সেই সময় সিনেমা হিট হবার পিছনে অন্যতম প্রভাবক ছিল গান, সিনেমার অ্যালব্যাম সুপারহিট। ‘ও মাই ডার্লিং আই লাভ ইউ’ গানটি তখন তরুনদের মুখে মুখে, তার পাশাপাশি আরো আছেন দুই উজ্জ্বল তারকা। কিন্তু বিধিবাম, সেই আলোচিত সিনেমাটি স্থান পেলো ফ্লপের তালিকায়। এই থেকেই শুরু হল ফ্লপের ধাক্কা ‘জিনা সির্ফ মেরে লিয়ে’, ‘ম্যায় প্রেম কি দিওয়ানি হু’, ‘ফিদা’সহ পরপর কয়েকটি ফ্লপ ছবি উপহার দেন কারিনা।
পরবর্তীতে ‘চামেলি’ সিনেমাটিও ফ্লপ হয় তার। তবে সেই সময় এমন সাহসী চরিত্রে অভিনয় করে বেশ প্রশংসা পেয়েছিলেন কারিনা। তার ক্যারিয়ারে অন্যতম সেরা সিনেমা হিসেবে বিবেচিত এই ‘চামেলি’ সিনেমাটি। সেই দু:সময়ে মনিরত্নমের তারকাবহুল সিনেমা ‘যুবা’য় তিন নায়িকার একজন হলেন।
‘অ্যায়েতরাজ’ সিনেমার নায়িকা হয়েও কোনো আলোচনায় আসলেন না কারিনা। ঠিক সেই সময়ে এক ফালি রোদ হয়ে এসেছিল ‘হালচাল’ সিনেমাটি। অনেকদিন পর পেলেন ব্যবসায়িক হিটের স্বাদ। ‘কিঁউ কি’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘৩৬ চায়না টাউন’-এর পর বিশাল ভরদ্বাজের ‘ওমকারা’ সিনেমায় অভিনয় তার ক্যারিয়ারে অন্যতম সেরা প্রাপ্তি।
২০০৭ সালে ‘জাব উই মেট’ এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার গুণে ক্যারিয়ারের মোড় অনেকটাই ঘুরে যায় কারিনার। কিন্তু ‘বিধিবাম’ শব্দটি তার পিছু ছাড়ছেই না। মুক্তির আগে বহুল আলোচিত ‘তাশান’ থেকে ‘ম্যায় অওর মিসেস খান্না’ গেলো ফ্লপের ঘরে শুধু ‘গোলমাল রিটার্নস’ দিয়ে পেলেন সফলতার স্বাদ।
এরপর প্রেমিক সাইফ আলী খানের সঙ্গে ‘কুরবান’ সিনেমা ফ্লপ দিয়ে বলিউডের ইতিহাসের যুগান্তকারী সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’ এর নায়িকা হয়ে গেলেন কারিনা। তিন বন্ধুর এই সিনেমায় হয়তো তিনি খুব বড় ভূমিকা পাননি। তবুও তিনি এই ইতিহাস সৃষ্টিকারী সিনেমার একমাত্র নায়িকা। পরের বছর পুরনো ছবি ‘মিলেঙ্গে মিলেঙ্গে’ বছরের যেমন সেরা ফ্লপ, তেমন ‘গোলমাল ৩’ ব্লকব্লাষ্টার।
তবে ‘উই আর ফ্যামিলি’-তে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছিলেন কারিনা। ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘গোলমাল ৩’র পর ‘বডিগার্ড’, ‘রা ওয়ান’, ‘সিংঘাম রিটার্নস’, ‘বাজরাঙ্গি ভাইজান’-এর মত সিনেমা দিয়ে শতকোটির নায়িকা হয়েছেন তিনি। ‘হিরোইন’ সিনেমা প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলেও ‘এজেন্ট বিনোদ’ও ফ্লপ, ‘দাবাঙ ২’-তে ‘ফেভিকল’ গানে আইটেম গার্ল হয়েছেন কারিনা।
তবে ‘কি এন্ড কা’ সেদিক থেকে বলতে গেলে সফল। ‘উড়তা পাঞ্জাব’-এ অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। দুই বছরের বিরতির পর সর্বশেষ মুক্তি পেয়েছে ‘ভিরে ডি ওয়েডিং’। সফলতার স্বাদ পেলেও সমালোচিত হয়েছেন কারিনা। তবে আক্ষেপ থাকবে হয়তো ‘ফ্যাশন’ আর ‘কুইন’-এর মত সিনেমা ছেড়ে দিয়ে বড়ই ভুল করেছেন কারিনা!
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ফিল্মফেয়ার পেয়েছেন পাঁচবার। পাঁচ বছর প্রেম করার পর ২০১২ সালে বিয়ে করেছেন জনপ্রিয় নায়ক ও নবাব পরিবারের ছেলে সাইফ আলী খানকে। সে সংসারে রয়েছে তার এক ছেলে। প্রয়াত মনসুর আলী খান টাইগার পতৌদি ও শর্মিলা ঠাকুর তার শ্বশুর-শাশুড়ি।
যদিও, এককালে অভিনেতা শহীদ কাপুরের সাথে ‘ইন অ্যান ওপেন রিলেশনশিপ’-এ ছিলেন কারিনা। শোনা যায়, এর আগে কিছুদিন হৃত্বিক রোশনকেও ডেট করেছেন তিনি। কারিনার মা ববি কাপুরও এক সময় নায়িকা ছিলেন। চাচা ঋষি কাপুর, চাচাতো ভাই রনবীর কাপুরসহ পুরো পরিবারেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম রয়েছে চলচ্চিত্রের মানুষ।
১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া এই তারকা তার পরিবারের সর্বকালের সেরা অভিনেত্রীদের একজন হওয়ার পরও সাদামাটা জীবনেই বিশ্বাস তার। সারাদিনের শ্যুটিং শেষে তার প্রিয় খাবার ভাত আর ডাল, সঙ্গে অল্প একটু ঘিঁ। বাড়িতে কারিনাকে সবাই ‘বেবো’ বলে ডাকে। নামটা বাবা রণধীর কাপুরের দেওয়া। ‘কারিনা’ নামটা রাখার পেছনেও একটা গল্প আছে। খুব কম লোকই সেটা জানেন। দাদা রাজ কাপুর প্রথমে কারিনার নাম রেখেছিলেন সিদ্ধিমা। কিন্তু, মা ববি কাপুর আপত্তি করেন।
এরপর কারিনা যখন পেটে আসলেন, তখন তিনি লিও টলস্টয়ের ‘আন্না কারেনিনা’ বইটা পড়ছিলেন। তখনই মেয়ে হলে নামটা ‘কারিনা’ রাখবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন। মায়ের ইচ্ছাতেই রাজি হয়ে যায় পুরো কাপুর পরিবার। সেদিন কে জানতো, একদিন এই নামটাই কাপুর পরিবারের শ্রেষ্ঠত্বে নতুন মাত্রা যোগ করবে! যাইহোক ফ্লপ ও হিটের জোয়ারে বেশ নাম খুঁড়িয়েছেন এই নায়িকা।