মায়ের যে স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় রণবীর
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১১:৩২ এএম, ২২ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার
তিনি একজন ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দুর্লভ আউটসাইডার। স্টার কিড নন, চকলেট বয়ও নন তবে সুলভে তাকে পাওয়া যায় না। তার মধ্যে আছে দারুণ একটা ব্যাপার, কারণ তিনি সব চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা রাখেন। তাই তিনি পাপারাজ্জিদের প্রথম পছন্দের আর পরিচালকদের স্বপ্নের নায়ক। ভাবছেন এভাবে কার কথা বলছি?
তিনি ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ থেকে ‘গুন্ডে’, ‘রাম-লিলা’, ‘দিল ধাড়াকদে দো’ কিংবা ‘বাজিরাও মাস্তানি’ অভিনব সব চরিত্র করে চমকে দিয়েছেন। তার নিজস্ব কোনো ঘরানা নেই, জটিল সব চরিত্রের জন্য পরিচালকদের প্রথম পছন্দ তিনি। সর্বশেষ সব কিছুকে ছাপিয়ে তিনি সঞ্জয় লিলা বানসালির সিনেমা ‘পদ্মাবত’ হাজির হয়েছেন। এখানে সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির চরিত্রে তিনি অভিনয় করে নিজেকে বলিউডের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। তিনি হলেন বলিউডের রণবীর সিংহ।
এই ছবিটি করে তিনি এমন জায়গা ঘুরে এসেছেন, যেখানে আগে কেউ যায়নি। নিজের চরিত্রে তিনি এতটাই বর্বর ছিলেন যে, দর্শকরা দেখেছেন আর ভেবেছেন, একজন মানুষ কী করে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে!
শৈশব কাল: রণবীর সিং ছোটবেলা থেকেই অভিনেতা হতে চাইতেন। স্কুলে থাকতেই মঞ্চ নাটক, বিতর্ক করতেন। একবার পারিবারিক একটা জন্মদিনের পার্টিতে বাবাই তাকে ডেকে নিয়ে এসে নাচতে বলেন। সে সময় ‘চুম্মা চুম্মা দে দে’ গানে নেচেছিলেন রণবীর। সেই ঘটনায় আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় নায়কের।
তবে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভয়ও ছিল। নব্বই দশকে বড় হয়েছেন এই নায়ক। বয়স তখন হবে ১৪-১৫। আশেপাশে দেখেছেন স্টারকিডদের ছড়াছড়ি। অভিনয়ের স্বপ্ন ছেড়ে বরং লেখালিখিতে মন দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেন তিনি।
আমেরিকায় পড়াশোনা করতে গিয়ে ভর্তি হন অভিনয়ের স্কুলে। প্রথম দিনই ইন্সট্রাক্টর তাকে বলেছিলেন, ‘আমি জানতে চাই না তুমি কে, তুমি কি করো, শুধু মঞ্চে ওঠো, আর আমাকে কিছু করে দেখাও। সেদিন থেকেই রণবীর ধ্যানজ্ঞান করে ফেলেছিলেন অভিনয়কে। এরপর থেকে পুরোদমে থিয়েটারে কাজ করা শুরু করেন তিনি। আমেরিকা থেকে পরবর্তীতে তিনি মুম্বাই ফিরে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের নেটওয়ার্ক বড় করতে থাকেন এই নায়ক।
এরপর মূল ধারার বাণিজ্যিক হিন্দি ছবিতে সুযোগ খুঁজতে থাকেন। একদিন তাই হলো, একটা ফোন আসলো। যশ রাজ ফিল্মসের একটা চরিত্র। এরপর পরিচাল মনিশ শর্মা ও আদিত্য চোপড়ার সাথে দেখা হয় নায়কের।
তারা বলেন, ‘রণবীর আমরা তোমার সাথে কাজ করতে যাচ্ছি।’ আদিত্য চোপড়া যখন কথাটা বললেন, তখন রনবীরও পাঁকা পেশাদার আচরণ করার চেষ্টা করছিলেন। তবে, এতটাই উত্তেজিত ছিলেন যে, মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিল না। মনিশ এসে যখন জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানালেন, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি রণবীর। চোখ তখন ভিজে গেছে আনন্দধারায়। করিডরের মাঝে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন, ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণের আনন্দে ভাসছিলেন রণবীর।
আদিত্য চোপড়া খাঁটি রত্ন চিনতে ভুল করেননি। পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন, ‘ব্যাপার না! তুমি করে ফেলবে’। ওই সময়ই তিনি হাতে ধরিয়ে দিলেন স্ক্রিপ্ট। এরপর শুরু হল শ্যুটিং। মুক্তি পেল ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’। বলিউডে যাত্রা শুরু করলেন রণবীর সিং-এর। বাকিটা সকলের জানা!
এরপর ২০১০ সালে শুরু হল এই রোলার কোস্টার রাইড। এরপর যত দিন গড়িয়েছে ততই মহীরূহ হয়ে উঠেছেন রণবীর। পরিচালকরা যত দুর্বোধ্য চরিত্রই এনে দিন না কেন, তিনি দেখে বলেছেন, ‘ব্যাপার না, করে ফেলবো’।
রণবীর এখনো চান মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে। রণবীরের মা দেখতে চান দীপিকা পাডুকোনের সঙ্গে ছেলের এমন একটা সিনেমা, যেখানে সিনেমা শেষে নায়ক নায়িকার মৃত্যু হবে না। মায়ের ইচ্ছা সিনেমায় এখনো রণবীর পূরণ করতে পারেননি তবে ভবিষ্যতে হয়ত তিনি সিনেমায় তা পূরণ করবেন। তার দর্শকরাও এখন সে অপেক্ষায়।