রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সর্বশেষ:
কেউ আপনার স্ত্রীকে ‘হট’ বললে সেটা কি ভালো লাগে, প্রশ্ন সানার পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে এবাদুলের মিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হংকং-দুবাইয়ে পাচারকারীরা বেপরোয়া ছিল শেখ পরিবারের প্রশ্রয়ে সোনার দাম দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য কতটুকু সত্য? দিনে মাত্র একবেলা খাচ্ছে গাজার অনেক মানুষ পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে বদলে দেয়া হয় মেট্রোরেলের নিয়োগবিধি যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে দৈনিক ১৩৯ কোটি টাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নজর চার খাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন হাথুরুসিংহের অপকর্ম ধামাচাপা দেন পাপন ‘ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ আমেরিকার জন্য বিশাল হুমকি হবে’ নীরবে সরবে চাঁদাবাজি পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ ইন্টারনেট ছাড়াই গুগল ম্যাপ ব্যবহারের উপায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ বাইডেনের ভাড়া ফাঁকিবাজদের ধরতে চলছে সাঁড়াশি অভিযান সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরীকে গুলি করে মরদেহ নিয়ে গেল বিএসএফ ভিসা ফি ছাড়াই এবার পাকিস্তান যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাফি আটক সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয়বহুল সফরে ২৬ ব্যাংক এমডি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ সাবেক সেনাপ্রধান ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা দিনের বেলায় মরুভূমির চেয়েও উত্তপ্ত চাঁদ ডেঙ্গুতে একদিনে ১১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৩২৭ ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠির সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে ২৬৭ প্রবাসী বাংলাদেশি অক্টোবরের মধ্যেই ‘আন্দোলনের ফসল’ ঘরে তুলতে চায় বিএনপি শর্তসাপেক্ষে নিউইয়র্কে মসজিদে আজানের অনুমতি বাংলাদেশ থেকে বিনা খরচে মালয়েশিয়া গেলেন ৩১ কর্মী খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর নির্দেশ জার্মানে পাঁচ বছর বাস করলেই পাওয়া যাবে নাগরিকত্ব বিএনপি-জাপা বৈঠক সিঙ্গাপুরে বাইডেন প্রশাসনকে হাসিনার কড়া বার্তা এবার হাসিনার পাশে রাশিয়া বঙ্গ সম্মেলনের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা স্টুডেন্ট লোন মওকুফ প্রস্তাব বাতিল বাংলাদেশিদের ওপর উপর্যুপরি হামলা যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে নিজ দেশে মানবাধিকার রক্ষা করা: শেখ হাসিনা তামিমের অবসর অভিযোগের তীর পাপনের দিকে নিউইয়র্কে এখন চোরের উপদ্রুব যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে হাতিরঝিলের ক্ষতি হবেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি, পাঁচ দিনে নিহত ৩৫ যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটছে বাখমুত থেকে পিছু হটেছে সেনারা, স্বীকার করল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণ ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোন হবে না, দাবি আবহাওয়া অধিদপ্তরের সুদানে যুদ্ধে সাড়ে ৪ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত : জাতিসংঘ পারস্য উপসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাপি ঋণে দ্বিতীয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে সারা দেশে ভোগান্তি রুশ হামলা সামলে ফের বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে যাচ্ছে ইউক্রেন রিজার্ভ সংকট, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের দুর্বল নীতিও দায়ী পূজার ‘জিন’ একা দেখতে পারলেই মিলবে লাখ টাকা! সিরিয়ায় আর্টিলারি হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল বাইডেন না দাঁড়ালে প্রার্থী হবেন কে নাইজেরিয়ায় ৭৪ জনকে গুলি করে হত্যা ভারতে বাড়ছে করোনা, বিধিনিষেধ জারি তিন রাজ্যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুলা যে কোনো দিন খুলবে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল দেশে করোনার নতুন ধরন, সতর্কতা বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করবো: মাহিয়া মাহি মর্মান্তিক, মেয়েটিকে ১২ কিলোমিটার টেনে নিয়ে গেল ঘাতক গাড়ি! স্ট্যামফোর্ড-আশাসহ ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বর্ষবরণে বায়ু-শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যে ধাক্কা কোনো ভুল মানুষকে পাশে রাখতে চাই না বাসস্থানের চরম সংকটে নিউইয়র্কবাসী ট্রাকসেল লাইনে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত একাকার! ছুটি ৬ মাসের বেশি হলে কুয়েতের ভিসা বাতিল ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত চুক্তিতে বিয়ে করে ইউরোপে পাড়ি আইফোন ১৪ প্রোর ক্যামেরায় নতুন দুই সমস্যা পায়ের কিছু অংশ কাটা হলো গায়ক আকবরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০০ কোটি ডলার নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আবার বাড়লো স্বর্ণের দাম
৮৪

আদর্শ সমাজের ভিত্তি ও বৈশিষ্ট্যাবলী

প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০১৯  

বাস্তব একটি বিষয়, যার দিকে ইবনে খালদুন তার মুখবন্ধে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, মানুষ সামাজিক জীব। উক্ত বিষয়টিকে কেউ কেউ এভাবে ব্যক্ত করেছেন যে, মানুষ সৃষ্টিগতভাবে মাদানি তথা শহুরে। অর্থাৎ মানুষের জন্য জনবসতি বা সমাজ আবশ্যক। বাস্তবতাও তাই। একে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। কারণ মানুষের জন্ম, জীবন যাপন ও মৃত্যুসহ যাবতীয় সবকিছু সমাজেই হয়ে থাকে।

 

একটি সমাজ কোন রূপরেখায় দাঁড়ালে তার যাবতীয় দিকগুলো সুন্দর হবে এ নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের কত গবেষণা! কিন্তু মুসলমানদের এর জন্য কোনো কষ্ট স্বীকার করতে হবে না। ইসলাম, সমাজ গঠনের জন্য এমন রূপরেখা পেশ করেছে যার ওপর ভিত্তি করে সমাজ গড়ে উঠলে ওই সমাজ হবে আদর্শ সমাজ। এর বিপরীত কোনো সমাজ গড়ে উঠলে, তা মানুষের জন্য বয়ে আনবে অকল্যাণ। তখন ওই সমাজ মানুষের বসবাসের উপযুক্ত থাকবে না। নিম্নে ইসলামি সমাজের ভিত্তি ও এর বৈশিষ্ট্যাবলী তুলে ধরা হয়েছে-

ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তি: 
ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তি হচ্ছে, ইসলামি আকিদা। এই আকিদাগুলো মানুষের চিন্তা-চেতনা, ওঠাবসা ও কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো ব্যক্তি এই আকিদাগুলোর ধারক-বাহক হতে পারলে, সে বুঝতে পারবে মানব জীবনের আসল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী? বস্তু ও মানুষের মাঝের সম্পর্কটা তার নিকট পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন সে বস্তু পেছনে লাগামহীনভাবে ছুটবে না। ইসলামি আকিদাগুলো হচ্ছে এমন, যা কোনো এক মুহূর্তের জন্যও জীবন থেকে পৃথক হয় না। এতে সর্বক্ষণ একজন ব্যক্তি অদৃশ্য একটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থেকে জীবন যাপন করে। মোটকথা, ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে, অকাট্য প্রমাণাদী দ্বারা সাব্যস্ত আকিদাসমূহ।

ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যাবলী-

(১) চারিত্রিক দিক: 
চারিত্রিক দিকগুলোর ওপর গুরুত্বারোপ ইসলামে চরিত্র গঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন ব্যবস্থাপনায় আখলাকের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, সমাজ ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে ইসলাম অন্যান্য ব্যবস্থা থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম। ইসলাম চায়, সমাজ যেন সমস্ত খারাপ চরিত্র থেকে পবিত্র থাকে। যেমন ব্যভিচার শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম। কেউ ব্যভিচারে লিপ্ত হলে তার শাস্তি হচ্ছে ব্যাত্রাঘাত, দেশান্তর বা প্রস্তরাঘাত। কাউকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া। এরও শাস্তি হচ্ছে, ব্যাত্রাঘাত। ব্যভিচার বা এ জাতীয় অন্যায়ের ক্ষেত্রে শাস্তি দেয়ার কারণ হচ্ছে, সমাজে যেন অশ্লিলতা ছড়িয়ে না পড়ে। খারাপ ভাষায় কিছু বলা যেমন গালি দেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র যা উপযুক্ত মনে করবে, সে শাস্তিই দিতে পারবে। সকল ধরনের জুয়া খেলা হারাম। মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া কবিরা গুনাহ। পরস্পর গোয়েন্দাগিরি করা, মন্দ বলা, গিবত করা হারাম। এ জাতীয় কাজ, যেগুলো সমাজের সদস্যদের পরস্পর শত্রুতা ও ঘৃনা ছড়ায় সব নিষিদ্ধ; ইসলামি সমাজ এগুলোর কোনোটাকে প্রশ্রয় দেয় না। লেনদেন হতে হবে স্বচ্ছ, ভালো নিয়ত ও আমানতদারীর সঙ্গে। অতএব, ধোঁকা, প্রতারণা ও মিথ্যার মিশ্রিত কোনো লেনদেনেই বৈধ হবে না। ইসলামি সমাজে অন্যায়ের কোনো স্থান নেই। কেননা, এটা জীবানুর মতো। যদি কোথাও থেকে যায় তাহলে সমাজে আস্তে আস্তে বিস্তার লাভ করবে এবং এক সময় মহামারির রূপ ধারণ করবে। এজন্য কোনো ব্যক্তি দ্বারা অন্যায় সংগঠিত হয়ে গেলে তা প্রকাশ করতেও বারণ করা হয়েছে।

ইসলাম বিভিন্ন খারাপ কাজ বন্ধের জন্য মাধ্যম হিসেবে অনেক কিছু গ্রহণ করেছে। যদি এই মাধ্যমগুলো গ্রহণ করা হয় তাহলে খারাপ কাজ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে আসবে। সেগুলো গ্রহন করা জরুরি; পরিহার করা অবৈধ। যেমন- কোনো নারী নির্জন স্থানে কোনো পুরুষের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবে না। সমাজের সদস্যদের পরস্পর দয়া, রহম ও ভালোবাসা দেখানোর জন্য ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। এটাও ইসলামের আখলাকের প্রতি গুরুত্বের বহিঃপ্রকাশ। পরিবার, প্রতিবেশী, সঙ্গিসাথী, সফরসঙ্গী, নিদেশি, গরীব, মিসকিন এ ধরনের সকল অসহায় মানুষকে সহযোগিতার জন্য ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা কল্যাণ ও খোদাভীরুতায় একে অপরকে সাহায্য কর।’ এর বিপরীত জুলুম, অন্যায়, মানুষের মাল লুন্ঠন ইত্যাদি কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা গোনাহ ও অবাধ্যতায় একে অপরকে সহযোগিতা করো না।’ (সূরা মায়েদা-২)। এই সহযোগিতা সম্পর্কে অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,  ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, কোনো কিছুকে তার সঙ্গে শরিক করো না। এবং সদ্ব্যবহার কর পিতা-মাতার সঙ্গে ও ইহসান কর আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীর সঙ্গে। (সূরা-নিসা-৩৬)।

(২) ন্যায়বিচার: 
ইসলামি সমাজের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ন্যায়বিচার। ন্যায়বিচার করাও আখলাকেরই অন্তর্ভূক্ত। বরং আখলাকের সর্বোচ্চ পর্যায় হচ্ছে ন্যায়বিচার। এরপরও ন্যায়বিচারের বিষয়টিকে, আখলাকের আলোচনা থেকে ভিন্নভাবে আনার কারণ হচ্ছে আখলাকের অন্য শাখা থেকে এর গুরুত্ব যে বেশি, তা বুঝানো। আল কোরআনের বহু আয়াতে ন্যায়বিচার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি আয়াত তুলে ধরা হচ্ছে-

এক. মানুষের মাঝে কখনো বিচার করা হলে, ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচার করবে তখন ন্যায়বিচার করবে।’ (সূরা নিসা-৫৮)।

দুই. কখনো কোনো বিষয়ে কথা বলতে হলে, ন্যায়ের কথা বলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা কথা বলবে তখন ইনসাফ করবে। যদিও যার প্রসঙ্গে কথা বলছো সে তোমাদের নিকটাত্মীয় হোক না কেন।’ (সূরা আনআম-১৫২)।

তিন. আল কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন ইনসাফের সঙ্গে বিচার করবেন। এর দ্বারা মূলত মানব জাতিকে ইনসাফের সঙ্গে বিচার করার তাগিদ দিয়েছেন। আল কোরআনের আয়াতটি হচ্ছে, ‘তাদের মাঝে (কিয়ামত দিবসে) ফয়সালা করা হবে ইনসাফের সঙ্গে। কারো ওপর কোনোরূপ জুলুম করা হবে না।’ (সূরা ইউনুস-৫৪)।

ন্যায়বিচারের আদেশ ও জুলুমের ব্যাপারে নিষেধের এই আয়াতগুলো এক সঙ্গে মিলালে এই কথা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ইসলাম হচ্ছে মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ধর্ম। ন্যায়বিচার ও জুলুমের ব্যাপারে ইসামের বিধি-বিধান কোনো সমাজ মেনে চললে ওই সমাজের রং হবে আলাদা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, যে সমাজে ন্যায়বিচার পেতে কোনো বেগ পেতে হয় না ওই সমাজের মানুষ মানবাধিকার থেকে কখনো বিরত হয় না। বরং প্রত্যেকে তার অধিকার প্রাপ্তির ব্যাপারে নিশ্চিত থাকে। কারণ, তখন রাষ্ট্রিয় কানুন হকের সঙ্গে থাকবে যদিও ওই হকপন্থি দুর্বল হোক না কেন। এর বিপরীত ঘটলে অর্থাৎ জুলুম সমাজে ব্যাপক এবং ন্যায়বিচার পাওয়া দুর্লভ হলে নাগরিকরা সর্বদা নিজেদের অধিকারগুলোর ব্যাপারে অনিশ্চয়তায় থাকে। তারা কখনো সমাজে ধীরস্থিরতার সঙ্গে বসবাস করতে পারে না। সর্বক্ষণ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে পার করে। এবং এই পরিবেশ সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার ইঙ্গিত বহন করে। ন্যায়বিচারে শীতিলতা দ্বারা সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে এই ইঙ্গিত রাসূল (সা.) আমাদের দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তীরা ধ্বংস হওয়ার কারণ হচ্ছে, যখন তাদের কোনো নামিদামি ব্যক্তি কোনো কিছু চুরি করতো তাকে ছেড়ে দেয়া হতো। আর দুর্বল চুরি করলে তার ওপর আইন প্রয়োগ করা হতো। এরপর রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ যদি আমার মেয়ে ফাতেমা চুরি করে তাহলেও তার হাত কাটা হবে।’ কোনো সমাজে জুলুম ব্যাপক হয়ে গেলে তখন সাধারণ মানুষ মনে করে এই সমাজে ন্যায় বিচারের আশা নেই তখন তারা নিজেরাও বিভিন্ন রকম অন্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আর এভাবেই একটি সমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হতে থাকে।

(৩) পারিবারিক ব্যবস্থা:
ইসলামি সমাজের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পারিবারিক ব্যবস্থা। কারণ কয়েকটি পরিবার নিয়েই একটি সমাজ গঠিত হয়। অতএব প্রত্যেকটি পরিবার সমাজের একটি অঙ্গের ন্যায়। পারিবারিক ব্যবস্থার ফলাফল হচ্ছে, প্রত্যেকটি পরিবার যদি ঠিক থাকে তাহলে সমাজ ঠিক থাকবে আর পারিবারিকভাবে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সমাজেও এর প্রভাব অবশ্যই পড়বে। এ জন্য ইসলাম পারিবারিক ব্যবস্থার উপর খুব গুরুত্বারোপ করেছে।

(৪) মহিলাদের কর্মস্থল নির্ধারণ:
ইসলামি সমাজের চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মহিলাদের কর্মস্থল নির্ধারণ করা। এ ব্যাপারে ইসলামি নির্দেশনা মেনে চললেই সম্ভব হবে সমাজের পবিত্রতা ও ইজ্জত আব্রু রক্ষা করা এবং আখলাক, দৃঢ়চেতা ও পরিচ্ছন্ন মেজাজের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জাতিকে উপহার দেয়া; যাদের দ্বারা দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। বর্তমানে উক্ত বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দাবী রাখে, যেন গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে কারো মনে কোন সংশয় না থাকে। (কিন্তু এই অনুবাদে তা বিস্তারিত তুলে ধরা সম্ভব নয়)।

(৫) প্রত্যেক ব্যক্তির সমাজ সংস্কারের দায়িত্ব পালন:
ইসলামি সমাজের পঞ্চম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সমাজের প্রত্যেক সদস্যকে উদ্বুদ্ধ করা যে, সে যেন সমাজ সংস্কারের দায়িত্ব পালন করে। অর্থাৎ সমাজের প্রত্যেক সদস্য সমাজ সংস্কার ও এর ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার ব্যাপারে সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছে কিনা এবং অন্যকে সহযোগিতা করেছে কিনা এ ব্যাপারে জবাবদিহিতার আওতায় থাকবে। স্বাভাবিক কথা, অন্যের ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার ব্যাপার যদি জবাবদিহিতার আওতায় থাকে তাহলে নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতির ব্যাপার আরো আগেই জবাবদিহিতার আওতায় থাকবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা জমীনবাসীকে সংশোধনের পর নিজেরা এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না। (সূরা আরাফ-৫৬)। 

মুসলমান নিজে যদি অন্যকে সংশোধন করতে অক্ষম হয় তাহলে তার দায়িত্ব হচ্ছে, নিজে ওই কাজে জড়াবে না। এই মূলনীতির ভিত্তিতে উলামায়ে কেরাম বলেন, ঘুষ নেয়া যেমন হারাম তেমনি দেয়াও হারাম। সমাজ সংস্কার ও এ থেকে বিশৃঙ্খলা দূর করা প্রতিটি সমাজের প্রত্যেক সদস্যের দায়িত্ব। এর দলীল হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালার বাণী ‘মুমিন পুরুষ ও মহিলারা একে অপরের ওলি, তারা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে। (সূরা তাওবা-৭১)। 

সমাজ সংস্কারে ব্যক্তির অংশগ্রহণের গুরুত্ব কোরআনে বর্ণিত ওই সকল ঘটনাগুলো দ্বারাও প্রমাণীত হয়, যেগুলোতে বলা হয়েছে সমাজ সংস্কারে শীতিলতার কারণে পূববর্তী বহু জাতি ধ্বংস হয়েছিলো। এবং এ ব্যাপারে বহু হাদিসও বর্ণিত হয়েছে।

সাপ্তাহিক আজকাল
সাপ্তাহিক আজকাল
এই বিভাগের আরো খবর