সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সর্বশেষ:
কেউ আপনার স্ত্রীকে ‘হট’ বললে সেটা কি ভালো লাগে, প্রশ্ন সানার পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে এবাদুলের মিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হংকং-দুবাইয়ে পাচারকারীরা বেপরোয়া ছিল শেখ পরিবারের প্রশ্রয়ে সোনার দাম দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য কতটুকু সত্য? দিনে মাত্র একবেলা খাচ্ছে গাজার অনেক মানুষ পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে বদলে দেয়া হয় মেট্রোরেলের নিয়োগবিধি যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে দৈনিক ১৩৯ কোটি টাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নজর চার খাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন হাথুরুসিংহের অপকর্ম ধামাচাপা দেন পাপন ‘ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ আমেরিকার জন্য বিশাল হুমকি হবে’ নীরবে সরবে চাঁদাবাজি পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ ইন্টারনেট ছাড়াই গুগল ম্যাপ ব্যবহারের উপায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ বাইডেনের ভাড়া ফাঁকিবাজদের ধরতে চলছে সাঁড়াশি অভিযান সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরীকে গুলি করে মরদেহ নিয়ে গেল বিএসএফ ভিসা ফি ছাড়াই এবার পাকিস্তান যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাফি আটক সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয়বহুল সফরে ২৬ ব্যাংক এমডি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ সাবেক সেনাপ্রধান ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা দিনের বেলায় মরুভূমির চেয়েও উত্তপ্ত চাঁদ ডেঙ্গুতে একদিনে ১১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৩২৭ ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠির সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে ২৬৭ প্রবাসী বাংলাদেশি অক্টোবরের মধ্যেই ‘আন্দোলনের ফসল’ ঘরে তুলতে চায় বিএনপি শর্তসাপেক্ষে নিউইয়র্কে মসজিদে আজানের অনুমতি বাংলাদেশ থেকে বিনা খরচে মালয়েশিয়া গেলেন ৩১ কর্মী খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর নির্দেশ জার্মানে পাঁচ বছর বাস করলেই পাওয়া যাবে নাগরিকত্ব বিএনপি-জাপা বৈঠক সিঙ্গাপুরে বাইডেন প্রশাসনকে হাসিনার কড়া বার্তা এবার হাসিনার পাশে রাশিয়া বঙ্গ সম্মেলনের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা স্টুডেন্ট লোন মওকুফ প্রস্তাব বাতিল বাংলাদেশিদের ওপর উপর্যুপরি হামলা যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে নিজ দেশে মানবাধিকার রক্ষা করা: শেখ হাসিনা তামিমের অবসর অভিযোগের তীর পাপনের দিকে নিউইয়র্কে এখন চোরের উপদ্রুব যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে হাতিরঝিলের ক্ষতি হবেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি, পাঁচ দিনে নিহত ৩৫ যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটছে বাখমুত থেকে পিছু হটেছে সেনারা, স্বীকার করল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণ ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোন হবে না, দাবি আবহাওয়া অধিদপ্তরের সুদানে যুদ্ধে সাড়ে ৪ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত : জাতিসংঘ পারস্য উপসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাপি ঋণে দ্বিতীয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে সারা দেশে ভোগান্তি রুশ হামলা সামলে ফের বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে যাচ্ছে ইউক্রেন রিজার্ভ সংকট, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের দুর্বল নীতিও দায়ী পূজার ‘জিন’ একা দেখতে পারলেই মিলবে লাখ টাকা! সিরিয়ায় আর্টিলারি হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল বাইডেন না দাঁড়ালে প্রার্থী হবেন কে নাইজেরিয়ায় ৭৪ জনকে গুলি করে হত্যা ভারতে বাড়ছে করোনা, বিধিনিষেধ জারি তিন রাজ্যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুলা যে কোনো দিন খুলবে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল দেশে করোনার নতুন ধরন, সতর্কতা বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করবো: মাহিয়া মাহি মর্মান্তিক, মেয়েটিকে ১২ কিলোমিটার টেনে নিয়ে গেল ঘাতক গাড়ি! স্ট্যামফোর্ড-আশাসহ ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বর্ষবরণে বায়ু-শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যে ধাক্কা কোনো ভুল মানুষকে পাশে রাখতে চাই না বাসস্থানের চরম সংকটে নিউইয়র্কবাসী ট্রাকসেল লাইনে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত একাকার! ছুটি ৬ মাসের বেশি হলে কুয়েতের ভিসা বাতিল ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত চুক্তিতে বিয়ে করে ইউরোপে পাড়ি আইফোন ১৪ প্রোর ক্যামেরায় নতুন দুই সমস্যা পায়ের কিছু অংশ কাটা হলো গায়ক আকবরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০০ কোটি ডলার নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আবার বাড়লো স্বর্ণের দাম
২৬৩

ইসলাম ও আধুনিক জ্ঞান

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

মুসলমানদের জন্য আল্লাহর প্রেরিত প্রথম বাণী নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কিছু ছিলো না। ছিলো না সামাজিকতা, লেনদেন ও দীনের মৌলিক কোনো আকীদা-বিশ্বাস।

 

তাহলে কী ছিলো প্রথম ওহি? মুসলমানদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রথম নাজিল হয় ‘ইকরা’ যার অর্থ হচ্ছে পড়। আশ্চর্য! নাজিল হচ্ছে ধর্মের কথা, প্রথমে আসবে নামাজ, রোজা ও হজ-জাকাতের বিধি-বিধান, কিন্তু বলা হচ্ছে, পড়া-লেখা, খাতা-কলমের কথা!

ইসলামে তাই শিক্ষার সর্বোচ্চ অবস্থান। শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়ার কারণে, ইসলাম বিশ্বের বুকে অনন্য একটি দীন বা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিল।

 

হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন একজন অশিক্ষিত ব্যক্তি। আল কোরআনে তাঁকে উম্মি বলা হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে অশিক্ষিত। ঐতিহাসিকদের মন্তব্য হচ্ছে, তাঁর আগমণকালে মক্কাবাসীই শুধু নয় বরং পুরো আরব ভূখণ্ড শিক্ষা-দীক্ষার আলো থেকে বিরত ছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায় তিনি শিক্ষার কদর বুঝবেন না। কিন্তু ইসলামের প্রথম নাজিলকৃত বাণী ছিলো ‘পড়’। তাই তিনি পড়ার গুরুত্ব বুঝতেন।

শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর জাতি দ্বারা কখনো সমাজ পরিবর্তন হতে পারে না, তিনি এই বিষয়টিও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি চাইতেন মানুষ জানুক, বুঝুক, পড়ুক। তিনি কখনো চাইতেন না, শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হাত ছাড়া হোক। বদরের যুদ্ধবন্দিদের অনেকে ছিলো, যারা মুক্তিপন দিতে অক্ষম। তবে তারা ছিলো শিক্ষিত। রাসূল (সা.) এটাকে মোক্ষম সুযোগ মনে করে কাজে লাগালেন। তিনি ঘোষণা করে দিলেন, শিক্ষিতরা যেন দশজন মুসলিম শিশুকে লেখাপড়া শিখায়। এটাই তাদের মুক্তিপন।

এ আলোচনা দ্বারা প্রমাণীত হয়, ইসলামে মূর্খতার কোনো স্থান নেই। জাহালত বা মূর্খতা বুযূগী বা দীনদারি হতে পারে না। আজ থেকে বিশ বছর পূর্বের সমাজের অবস্থা আমরা অনেকে দেখেছি। সমাজের ব্যতিক্রম কিছু মানুষ ছাড়া, শিক্ষিত, অশিক্ষিত কারো কাছেই শিক্ষার তেমন কদর ছিলো না। ধন-দৌলতই ছিলো মূল। তাহলে চৌদ্দশত বছর পূর্বে, শিক্ষার ব্যাপারে একজন অশিক্ষিত ব্যক্তির এই গুরুত্বকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? এর দ্বারা ইসলামে শিক্ষা-দীক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।

 

জ্ঞান সাধারণত দু’প্রকার। এক. শরয়ী জ্ঞান বা দীনি বিষয় জানা। দুই. সাধারণ জ্ঞান বা জগতে চলতে ফিরতে যে জ্ঞানের প্রয়োজন। ইসলাম দীনি বিষয় শিখার জন্য গুরুত্ব দিয়েছে, তেমনি সাধারণ জ্ঞান শিখার জন্যও। আল কোরআন ও রাসূল (সা.) এর হাদীস দ্বারা বিষয়টি প্রমাণীত।

আল কোরআনে সাধারণ জ্ঞান শিখার নিদের্শ:
আল্লাহ তায়ালা বলেন,  ‘আর তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি ও পালিত ঘোড়ার দল প্রস্তুত রাখ, যার দ্বারা তোমরা ভীত রাখবে আল্লাহর দুশমনদেরকে।’ (সূরা আনফাল-৬০) শক্তি বলতে সমরাস্ত্র উদ্দেশ্য। স্বাভাবিক কথা, প্রস্তুত রাখতে হলে, আগে প্রস্তুতের পদ্ধতি জানতে হবে। তাই সমরাস্ত্র প্রস্তুতের অন্তরালে, তা তৈরির পদ্ধতি শিখার নিদের্শ রয়েছে। মুফতী শফী (রাহ.) লেখেন, ‘আল কোরআনে বর্ণিত ‘কুওত’ শব্দের মধ্যে সব ধরনের যুদ্ধের সামান, সমরাস্ত্র ও বাহন অন্তর্ভূক্ত। প্রশিক্ষণ ও সমর বিদ্যার ক্ষেত্রে ওই সময়ের প্রচলিত পদ্ধতির কথা এখানে উল্লেখ করা হয়নি বরং ‘কুওত’ শব্দকে ব্যাপক রাখা হয়েছে, যেন প্রত্যেক যুগের উপযোগী বস্তুকে শামিল করতে পারে। আগের যুগের তীর-তলোয়ার, তার পরের বন্দুক, তোপ ও বর্তমান সময়ের যুদ্ধ বিমান, পারমানবিক বোমা, সাবমেরিনসহ সব-ই এই আয়াতের অন্তর্ভূক্ত। তাই এগুলো মুসলমানদের থাকা দরকার। এগুলো তৈরি করার জন্য যে বিদ্যা শিখতে হয়, তা যদি মুসলমানদের হেফাজত ও তাদের দুশমনদের মোকাবেলায় সহযোগীতার নিয়তে হয় তাহলে তাও জিহাদের হুকুমে হবে। (মাআরেফুল কোরআন, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৭২)

 

অন্য জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আমি নাজিল করেছি লোহা, তাতে আছে প্রচণ্ড শক্তি ও মানুষের বহুবিধ উপকারীতা।’ (সূরা হাদীদ-২৫) লোহা দ্বারা বহুবিধ উপকার লাভ করা সম্ভব যখন তাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাবে। আর এর জন্য প্রয়োজন হচ্ছে, কারিগরি ও টেকনোলজি জানা। তাই এই আয়াতে পরোক্ষভাবে ওগুলো শিখারও নিদের্শ রয়েছে। সূরা জুমারের ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা জানে আর যারা জানে না, উভয়ে কী সমান? এখানে আল্লাহ তায়ালা বিষয় ঠিক করে বলেন নাই। তাই আমরা বলতে পারি, শরীয়ত সম্মত বিষয় যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কখনো সমান হতে পারে না। এখানে সাধারণ জ্ঞান শিখার প্রতি উৎসাহ রয়েছে।

হাদীসে সাধারণ জ্ঞান শিখার প্রতি উৎসাহ দান: 
বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণীত হয় রাসূল (সা.) সাধারণ জ্ঞান শিখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন এক হাদীসে এসেছে, ‘আল্লাহ তায়ালা একটি তীর দ্বারা তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এক. যে তীর বানায় এবং এর দ্বারা উদ্দেশ্য থাকে মানুষের কল্যাণ। দুই. নিক্ষেপকারী। তিন. নিক্ষেপে সাহায্যকারী।’ তিনি আরো বলেন, ‘ তোমরা তীর নিক্ষেপ ও ঘোড় সওয়ারির প্রশিক্ষণ দাও। তবে আমার কাছে তীর নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ, ঘোড় সওয়ারি থেকে পছন্দ।’ (তিরমিজী-১৬৩৭)  

অপর এক হাদীসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘দুর্বল প্রকৃতির মুমিন অপেক্ষা, শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় এবং  উত্তম। আর প্রত্যেকের মধ্যে কিছু না কিছু কল্যাণ নিহিত আছে। যে জিনিস তোমার উপকারে আসবে, তার প্রতি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর ও হীনবল হয়ো না।’ (সহীহ মৃসলিম-৬৯৪৫)

শক্তিশালী বলতে শুধু দৈহিকভাবে শক্তিশালী উদ্দেশ্য নয়। বরং কৌশল ও প্রযুক্তিগত শক্তিও এখানে উদ্দেশ্য। তাই যারা ওইগুলো শিখে শক্তিশালী হবে, তাদের কদর আল্লাহর কাছে কিছুটা ব্যতিক্রম হবে নিশ্চয়। হাদীসের মধ্যে আরো বলা হয়েছে, ‘যে জিনিস তোমার উপকারে আসবে, তার প্রতি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর।’ এখানে উপকারে ক্ষেত্র নির্ধারণ না করায়, জাগতিক ফায়দার বস্তু শিখাও হাদীসের অন্তর্ভূক্ত হবে।

আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তিনি তাঁদেরকে দীনি বিষয় শেখানোর পাশাপাশি বহু নবী-রাসূলকে সাধারণ জ্ঞানও শিখিয়েছিলেন। যেমন হজরত দাউদ (আ.) সম্পর্কে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা তাকে লোহা দিয়ে এক বিশেষ ধরণের পোশাক তৈরির পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন। আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর আমি তাকে তোমাদের উপকারের জন্য এক প্রকার পোশাক তৈরি করা শিক্ষা দিয়েছিলাম।’ (সূরা আম্বিয়া-৮০)

 

হজরত যাকারিয়া (আ.) কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। (সহীহ মুসলিম-৬৩১২) নিশ্চিতভাবে বলা যায় বর্তমান যুগের একজন ইঞ্জিনিয়ারের সমাজে যে অবস্থান, ওই সময় একজন কাঠমিস্ত্রির তা ছিলো। তারা আমাদের আদর্শ। তাই তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে হবে।

দাওয়াতের ময়দানে আধুনিক জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা:
দীনের দায়ী, ইসলামী বুদ্ধিজীবী মহল কেন আধুনিক জ্ঞান শিখবে, শিখে তারা কোন জায়গায় কাজে লাগাবে? ‘দীনের দায়ীর সংস্কৃতি’ নামক গ্রন্হে আরব বিশ্বের প্রখ্যাত গবেষক আলেম ইউসুফ আল কারজাবী হাফিজাহুল্লাহ এ বিষয়ে চমৎকার আলোচনা করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিক নিম্নে তুলে ধরা হচ্ছে।

(এক) বর্তমানে এমন কোনো ঘর পাওয়া যাবে না, যাতে আধুনিক জ্ঞান দ্বারা আবিস্কৃত কনো না কোনো বস্তু নেই। শহর বন্দরের প্রত্যেকটা ঘর আধুনিক টেকনোলজি সমৃদ্ধ। তাতে অনেক বস্তু এমন আছে, যেগুলো সত্তাগতভাবে ভালো এবং ব্যবহারও হচ্ছে ভালো জায়গায়। আবার বহু আছে সত্তাগতভাবে ভালো, কিন্তু হতভাগা বনি আদম সেগুলোকে ব্যবহার করছে অসৎ কাজে। মুসলমানদের পবিত্র জায়গা মসজিদ। আজ সেখানেও আধুনিক টেকনোলজির বহু কিছুর দেখা মেলে। তো যার দ্বারা আজ সারাটা দুনিয়া নিয়ন্ত্রন হচ্ছে, রাতারাতি পাল্টে যাচ্ছে পরিবেশের সবকিছু, সমাজের কর্ণধার উলামা সমাজ, দীনি বুদ্ধিজীবী মহল সে ব্যাপারে একেবারেই বেখবর থাকবে তা কীভাবে হয়!

(দুই) বিশ্ব সাহিত্যের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে আধুনিক জ্ঞানের ছড়াছড়ি। সাহিত্যের নামে বহুকিছু এমন আছে, মুসলমানদের ঈমান আকিদায় সংশয় সৃষ্টির জন্য যেগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে। এগুলো খন্ডন করে ইসলামের সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হলে, বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা থাকা দরকার। এ জন্য প্রয়োজন বিষয়ভিত্তিক প্রচুর অধ্যয়ন। অধ্যয়ন না করে, শুধু শুনে কখনো জাতিকে নির্ভুল তথ্য জানানো সম্ভব নয়। দাওয়াতের ময়দানে এরকম পদক্ষেপ খেয়ানতেরও শামিল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আপনি ওই বিষয়ের পেছনে পড়বেন না, যে বিষয়ে আপনার জ্ঞান নেই। নিশ্চয় কর্ণ, চোখ ও কলব ওই প্রত্যেকটি সম্পর্কে আপনি জিজ্ঞাসিত হবেন। (সূরা বনী ইসরাইল-৩৬)

(তিন) আধুনিক জ্ঞানের বহু বিষয় আছে, যেগুলোকে দীন ও দীনের বিধি-বিধান সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়। যেগুলো জানা থাকলে কোরআন হাদীসে বর্ণিত বহু তর্থ্যরে মর্ম সহজে অনুধাবন করা যায়। সম্ভব হয় দীন বিরোধীদের প্রোপাগান্ডার সমুচিত জবাব দেয়া। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি দৃষ্টান্ত তোলে ধরা হচ্ছে-

 

আল কোরআনে বলা হয়েছে,  ‘যে ব্যক্তি বিন্দুমাত্র সৎকর্ম করেছে, (কিয়ামত দিবসে) সে তা দেখতে পাবে; আর যে ব্যক্তি বিন্দুমাত্র অসৎকর্ম করেছে, সেও তা দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল-৭-৮) এক সময় গবেষকরা মনে করতো, কোনো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ওই ঘটনা পুনরায় দেখা অসম্ভব। তাই দুনিয়ায় ঘটে যাওয়া ঘটনা আখেরাতে দেখতে পারবে না বরং তা প্রতিদান দেখতে পারবে। অর্থাৎ ভারো কাজের প্রতিদান স্বরূপ জান্নাতকে দেখতে পারবে আর খারাপ কাজের প্রতিদান স্বরূপ জাহান্নামকে দেখতে পাবে। 

এক সময় গবেষকরা আবিস্কার করেন যে, মানুষের কথা কোনটাই একেবারে হারিয়ে যায় না বরং মহাশূন্যে বিদ্যমান থাকে। দীর্ঘ সময় পরও এগুলোকে আগের মতোই শুনা সম্ভব। তখনও কিন্তু আধুনিক মেমোরিকার্ড আবিস্কার হয়নি। আধুনিক মেমোরিকার্ড ও এ ধরনের প্রযুক্তি, উল্লেখিত আয়াতের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে যে, মানুষের কাজ সংরক্ষণ করে পুনরায় দেখা, দেখানো সম্ভব। মানুষের সারা জীবনের রেকর্ড সামান্য একটা মেমোরিকার্ড যদি সংরক্ষণ করতে পারে তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা কী পারবেন না বান্দার আমলের রেকর্ড তৈরি করে দেখাতে?
  
উদাহরণ হিসেবে মধুর কথাও বলা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে মধু ব্যবহার হচ্ছে। এই তথ্যের মূল সূত্র কিন্তু আল কোরআন। মৌমাছি ও মধু সম্পর্কে আল কোরআনে রয়েছে চমৎকার বর্ণনা। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আপনার রব মৌমাছিকে আদেশ করেছেন যে, ‘তুমি ঘর তৈরি কর পাহাড়ে, গাছে ও মানুষ যে মাচান তৈরি করে তাতে। অতঃপর সব রকমের ফল থেকে খাও, তার পর চল আপন রবের উন্মুক্ত-বাধাহীন পথ সমূহে।’ তার পেট থেকে নির্গত হয় বিভিন্ন রঙের পানীয়, যাতে আছে মানুষের রোগমুক্তি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে সেই লোকদের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে। (সূরা: নাহল-৬৭-৬৮) 

এখন কোনো ব্যক্তি আল কোরআনের এ সূত্র ধরে, মধুর রং, উপকারীতা ও মৌমাছি চাষের উপযুক্ত পরিবেশ কোনটা গবেষণা শুরু করলে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মানুষকে উপহার দিতে পারবে। এতে ইসলামের শেষ্ঠত্ব প্রকাশ পাবে এবং প্রতিষ্ঠত হবে ইসলাম একটি জীবন্ত ধর্ম।

আধুনিক জ্ঞান শেখা-শিখানোতেও রয়েছে সওয়াব: 
আধুনিক জ্ঞান মানবকল্যাণের জন্য হলে এটাও মুসলমানের দীনদারিতে পরিণত হবে। মূফতি শফী (রাহ.) সূরা আম্বিয়ার ৮০ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, ‘যে শিল্প মানুষের প্রয়োজন পূরণ করে, তা শেখা, শিখানো উভয়টি দ্বারা ছওয়াব লাভ হয়। তবে শর্ত হচ্ছে নিয়ত খালেস তথা মানবকল্যাণের হতে হবে। শুধু রুটি রোজগারের জন্য নয়। তার পর তিনি লেখেন, ‘রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের কল্যাণের চিন্তা থেকে কর্ম সম্পাদন করবে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে মূসা (আ.) এর মায়ের মত। অর্থাৎ মূসা (আ.) এর মা নিজের সন্তানের চিন্তায়ই দুধ পান করিয়েছেন। মাঝখানে ফেরাউনের কাছ থেকে ফাও পারিশ্রমিক পেয়েছেন। তেমনিভাবে যে ব্যক্তি নিজের শিল্প দ্বারা মাখলুকের নিয়ত করবে, নিয়তের কারণে ছওয়াব পাবে। আর অতিরিক্ত জাগতিক ফায়দা লাভ করবে। (মাআরেফুল কুরআন, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-২১২)

সাপ্তাহিক আজকাল
সাপ্তাহিক আজকাল
এই বিভাগের আরো খবর