মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সর্বশেষ:
কেউ আপনার স্ত্রীকে ‘হট’ বললে সেটা কি ভালো লাগে, প্রশ্ন সানার পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে এবাদুলের মিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হংকং-দুবাইয়ে পাচারকারীরা বেপরোয়া ছিল শেখ পরিবারের প্রশ্রয়ে সোনার দাম দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য কতটুকু সত্য? দিনে মাত্র একবেলা খাচ্ছে গাজার অনেক মানুষ পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে বদলে দেয়া হয় মেট্রোরেলের নিয়োগবিধি যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে দৈনিক ১৩৯ কোটি টাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নজর চার খাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন হাথুরুসিংহের অপকর্ম ধামাচাপা দেন পাপন ‘ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ আমেরিকার জন্য বিশাল হুমকি হবে’ নীরবে সরবে চাঁদাবাজি পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ ইন্টারনেট ছাড়াই গুগল ম্যাপ ব্যবহারের উপায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ বাইডেনের ভাড়া ফাঁকিবাজদের ধরতে চলছে সাঁড়াশি অভিযান সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরীকে গুলি করে মরদেহ নিয়ে গেল বিএসএফ ভিসা ফি ছাড়াই এবার পাকিস্তান যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাফি আটক সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয়বহুল সফরে ২৬ ব্যাংক এমডি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ সাবেক সেনাপ্রধান ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা দিনের বেলায় মরুভূমির চেয়েও উত্তপ্ত চাঁদ ডেঙ্গুতে একদিনে ১১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৩২৭ ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠির সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে ২৬৭ প্রবাসী বাংলাদেশি অক্টোবরের মধ্যেই ‘আন্দোলনের ফসল’ ঘরে তুলতে চায় বিএনপি শর্তসাপেক্ষে নিউইয়র্কে মসজিদে আজানের অনুমতি বাংলাদেশ থেকে বিনা খরচে মালয়েশিয়া গেলেন ৩১ কর্মী খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর নির্দেশ জার্মানে পাঁচ বছর বাস করলেই পাওয়া যাবে নাগরিকত্ব বিএনপি-জাপা বৈঠক সিঙ্গাপুরে বাইডেন প্রশাসনকে হাসিনার কড়া বার্তা এবার হাসিনার পাশে রাশিয়া বঙ্গ সম্মেলনের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা স্টুডেন্ট লোন মওকুফ প্রস্তাব বাতিল বাংলাদেশিদের ওপর উপর্যুপরি হামলা যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে নিজ দেশে মানবাধিকার রক্ষা করা: শেখ হাসিনা তামিমের অবসর অভিযোগের তীর পাপনের দিকে নিউইয়র্কে এখন চোরের উপদ্রুব যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে হাতিরঝিলের ক্ষতি হবেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি, পাঁচ দিনে নিহত ৩৫ যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটছে বাখমুত থেকে পিছু হটেছে সেনারা, স্বীকার করল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণ ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোন হবে না, দাবি আবহাওয়া অধিদপ্তরের সুদানে যুদ্ধে সাড়ে ৪ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত : জাতিসংঘ পারস্য উপসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাপি ঋণে দ্বিতীয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে সারা দেশে ভোগান্তি রুশ হামলা সামলে ফের বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে যাচ্ছে ইউক্রেন রিজার্ভ সংকট, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের দুর্বল নীতিও দায়ী পূজার ‘জিন’ একা দেখতে পারলেই মিলবে লাখ টাকা! সিরিয়ায় আর্টিলারি হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল বাইডেন না দাঁড়ালে প্রার্থী হবেন কে নাইজেরিয়ায় ৭৪ জনকে গুলি করে হত্যা ভারতে বাড়ছে করোনা, বিধিনিষেধ জারি তিন রাজ্যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুলা যে কোনো দিন খুলবে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল দেশে করোনার নতুন ধরন, সতর্কতা বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করবো: মাহিয়া মাহি মর্মান্তিক, মেয়েটিকে ১২ কিলোমিটার টেনে নিয়ে গেল ঘাতক গাড়ি! স্ট্যামফোর্ড-আশাসহ ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বর্ষবরণে বায়ু-শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যে ধাক্কা কোনো ভুল মানুষকে পাশে রাখতে চাই না বাসস্থানের চরম সংকটে নিউইয়র্কবাসী ট্রাকসেল লাইনে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত একাকার! ছুটি ৬ মাসের বেশি হলে কুয়েতের ভিসা বাতিল ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত চুক্তিতে বিয়ে করে ইউরোপে পাড়ি আইফোন ১৪ প্রোর ক্যামেরায় নতুন দুই সমস্যা পায়ের কিছু অংশ কাটা হলো গায়ক আকবরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০০ কোটি ডলার নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আবার বাড়লো স্বর্ণের দাম
১৬৮

ইসলামে কবি ও কবিতার মর্যাদা

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯  

বর্তমান বিশ্বের কোথাও কোথাও কবিতা আবৃত্তি হারাম ফতোয়া দিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। সম্প্রতি আফগানিস্তানে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। ধর্মের কোনো গ্রন্থে লেখা আছে কবিতা আবৃত্তি হারাম? আর কেউ হারাম কাজ করলেই নির্বিচারে তাকে হত্যা করা হবে?

যারা হামলা চালিয়েছে তারা জঙ্গি। সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। সন্ত্রাসীদের মনে কবিতাপ্রেম নেই। মনুষ্যবোধ নেই। এদের ধর্মই মানুষ হত্যা করা করা। অথচ খুব স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ডের ভার ইসলামের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

পবিত্র কোরআনের একটি সূরার নাম হলো ‘শূআরা’ মানে কবিগণ। এই সূরাতে অনেক নবী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আলোচনা শেষে আমাদের বলা হয়েছে যে, আমাদের নবী যেমন কবি নন তেমনি তিনি কোনো কবিতা আমাদের শুনাচ্ছেন না; তিনি যা বলেন তা হলো ঐশী বাণী আল্লাহর কালাম। এ সূরার ২২৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, এবং কবিদের অনুসরণ করে তারাই যারা বিভ্রান্ত। পরের আয়াতে বলা হচ্ছে, তুমি কি দেখো না তারা বিভ্রান্ত হয়ে (কল্পনার জগতে) প্রত্যেক উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায়। এবং তারা যা বলে তারা তা করে না। (সূরা শুআরা: ২২৫-২২৬)

 
উপরোক্ত তিনটি আয়াত দেখে মনে হতে পারে, ইসলামে কাব্য চর্চা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, তা হারাম! প্রকৃত পক্ষে তা কখনোই নয়। কেননা স্বয়ং আমাদের রাসূল (সা.) ছড়া রচনা করে আবৃত্তি করতেন, পরের মুখে কবিতা শুনতেন। অনেক বড় বড় সাহাবী, তাবেয়ী, বুযুর্গ কবিতা রচনা করতেন, শুনতেন, আলোচনা করতেন। তবে কি মনে হয় পবিত্র কোরআনের সঙ্গে সাহাবিদের আচরণ বৈষম্যমূলক?

না। সূরায় সব কবিদের এবং সব কবিতার দোষ ধরা উদ্দেশ্য নয়। শুধু যারা এক আল্লাহকে বাদ দিয়ে ভ্রান্ত মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে মানুষদের বিভ্রান্ত করে তারাই নিজেরা বিভ্রান্ত এবং অপরকে বিভ্রান্ত করে। এ বিষয়টি সূরায় বলা হয়েছে। আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কবিতা তো এক প্রকার কথাই, সুতরাং ভালো কবিতা ভালো কথা, আর খারাপ কবিতা খারাপ কথা।’ (দারা কুতনী, মিশকাত: ৪৫৯৭)

ইবনে বাত্তাল বলেন, যে কবিতায় আল্লাহর একত্ববাদ, তার স্মরণ ও ইসলামের প্রতি ভালোবাসা বর্ণিত হয় তা কাম্য ও গ্রহণীয়। যে কবিতা দ্বারা আল্লাহর অবাধ্যতা করা হয়, তার স্মরণ থেকে দূরে রাখে, পরের অধিকার নষ্ট হয়, অন্যায়ভাবে কারো নিন্দা করা হয়, কোনো প্রকার অশ্লীলতা প্রকাশ পায় তা নিন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য। আর যে কবিতায় আল্লাহ ও পরকালকে স্মরণ করা হয়, যা বস্তুনিষ্ঠ, যার দ্বারা মানবতার উপকার সাধিত হয় তাই কাম্য আর তা প্রশংসনীয়।


 
রাসূল (সা.) বলেছেন, কোনো কোনো কবিতা প্রজ্ঞাময়! (বুখারি, মিশকাত: ৪৫৭৫) রাসূল (সা.) কবি সাহাবি লাবিদের প্রশংসায় বলেন, যার কবিতা সবচেয়ে সত্য কথা বলে তা হলো লবীদের কবিতা ‘আল্লাহ ছাড়া সবকিছুই বাতিল’। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত: ৪৫৭৭)

ইসলামের যুগে সবচেয়ে বড় কবি ছিলেন ‘হাস্সান’। আয়েশা (রা.)-কে নিয়ে যারা অপবাদ রটিয়েছিল তাদের মধ্যে মুসলমানদের কিছু লোকও ছিল, তাদের অন্যতম হলেন এ কবি হাসসান। তারপরও আয়েশা (রা.) তাকে তার দরবার থেকে বিতাড়িত করেননি এ কারণে যে, রাসূল (সা.) তাকে ভালোবাসতেন আর সে মুসলমানদের পক্ষ থেকে কাফেরদের জবাব দিতেন কবিতার মাধ্যমে। (বুখারি)

যে কবিতা কল্যাণের তা কল্যাণময়। আর যে কবিতা অকল্যাণের তা নিন্দনীয় এবং হারাম। কোরআনে অশ্লীল ও কুফরি কবিতারই নিন্দা করা হয়েছে। তবে দেশপ্রেম ও মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করে এমন কবিতার প্রশংসা রয়েছে ইসলামে। তবে কেউ মন্দ কবিতা আবৃত্তি করলেও তাকে নির্বিচারে হত্যার কোনো দৃষ্টান্ত ও বৈধতা ইসলামে নেই।

পৃথিবীতে সবকিছুরই ভালোমন্দ রয়েছে। কবিতারও ভালো মন্দ দিক রয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে কবিতা দু’ধরনের। একটি সত্য ও সুন্দরের পথপ্রদর্শক অপরটি মানব সভ্যতার জন্য ধ্বংসাত্মক, অকল্যাণকর, কুরুচিপূর্ণ বিভ্রান্ত চিন্তার ধারক। ইসলাম একদিকে যেমন কল্যাণকর সাহিত্যের সৃষ্টিতে উৎসাহ ও প্রেরণা দিয়েছে ঠিক তেমনি সভ্যতার জন্য ক্ষতিকারক ও অশ্লীল সাহিত্য তৈরিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।


 
উপরে বর্ণিত কোরআনের আয়াত নাযিল হওয়ার পর হজরত আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা, হাসসান বিন সাবিত, কা’ব ইবনে মালিক প্রমুখ সাহাবী কবি কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমতে হাজির হন এবং আরজ করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত নাযিল করেছেন। আমরাও তো কবিতা রচনা করি, এখন আমাদের উপায় কী? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আয়াতের শেষাংশ পাঠ কর। এ আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, তোমাদের কবিতা যেন অনর্থক ও ভ্রান্ত উদ্দেশ্যে প্রণোদিত না হয়। কাজেই তোমরা আয়াতের শেষাংশে উল্লিখিত কবিদের শামিল। (ফতহুল বারী)

আলোচ্য আয়াতের একদিকে বিপথগামী মুশরিক কবিদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং অপরদিকে তুলনামূলক পর্যালোচনার মাধ্যমে সত্য ও সুন্দরের পতাকাবাহী ঈমানদার কবিদের শ্রেষ্ঠত্ব নিরুপণ করে তাদেরকে উৎসাহিত করা হয়েছে। যারা কবি তারা প্রাকৃতিকভাবেই কিছুটা ভাবুক, কল্পনাপ্রবণ ও আবেগী। এটা তাদের স্বভাবধর্ম। এ কল্পনাপ্রবণ ও আবেগী না হলে কাব্য সৃষ্টি করা যায় না। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে কবিদের প্রতি বিশেষ এক নেয়ামত। যে কারণে সাধারণ মানুষ যা পারে না তারা পারেন, আর পারেন বলেই তারা কবি।


 
কবিদের এ ভাবের জগৎ থেকে, কল্পনাপ্রবণতা থেকে দূরে রাখা আল্লাহর ইচ্ছা নয়। তবে তারা যেন এ ভাবের জগতে বিচরণ করতে গিয়ে বিপথগামী না হয় এ জন্য আল্লাহ তায়ালা কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন: ১. একজন কবিকে ঈমানদার হতে হবে। ২. ঈমান আনার সঙ্গে সঙ্গে অসৎ কর্ম বর্জন করে সত্য ও সুন্দরের অনুসারী হতে হবে। ৩. এ ভাবপ্রবণতা ও আবেগী বিচরণ যাতে তাকে সৎ পথ থেকে বিচ্যুত করতে না পারে সে জন্য আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে সদা সর্বদা তাঁর সাহায্য চাইতে হবে। ৪. আর যখনি মানবতা বিপন্ন হবে, নিপীড়িত, নির্যাতিত হবে তখনি কবি তার সর্ব শক্তি নিয়োগ করে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করবেন। মানুষকে তার প্রাপ্য অধিকার সচেতন করে তোলার জন্য, নিপীড়ন ও নির্যাতনের ব্যপারে জনগণকে একত্র করার জন্য, কিসে এবং কিভাবে মানবতা বিপন্ন হচ্ছে তা স্পষ্ট করার জন্য সভ্যতার স্বপক্ষে বিপ্লবের বাণী উচ্চকিত করার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে কবিদের।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে যেমন কবিতা শুনতে ভালোবাসতেন ঠিক তেমনি অন্যদেরও তিনি কবিতার প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্যে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি বলেছেন ‘যে দু’টো মনোরম আবরণে আল্লাহ তায়ালা বিশ্বকে সাজিয়ে থাকেন, কবিতা তার একটি।’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে কোনো কোনো কবিতায় রয়েছে প্রকৃতি জ্ঞানের কথা।’ তিনি সাহাবীদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তনদেরকে কবিতা শেখাও, এতে তার কথা মিষ্টি ও সুরেলা হবে।’ হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) আরো বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা কাফির, মুশরিকদের নিন্দা করে কাব্য লড়াইয়ে নেমে পড়। তীরের ফলার চেয়েও তা তাদেরকে বেশি আহত করবে।’

তখন ইবনে রাওয়াহাকে পাঠানো হলো। সম্পূর্ণ মুগ্ধ হতে পারলেন না নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। কা’ব বিন মালিককেও পাঠানো হলো। অবশেষে যখন হাস্সান এলেন, তিনি বললেন, ‘সবশেষে তোমরা ওকে পাঠালে? ও তো লেজের আঘাতে সংহারকারী তেজোদীপ্ত সিংহ শাবক।’ কথা শুনে হাস্সান (রাঃ) আনন্দে জিভ নাড়তে নাড়তে বললেন, ‘সেই মহান সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্যবাণী সহকারে পাঠিয়েছেন। এ জিভ দিয়ে তাদের চামড়া ছুলে ফেলার মত গাত্রদাহ সৃষ্টি করেই ছাড়ব।’

এ দিন থেকেই আনসারদের মধ্যে তিনজন ইসলামী কবি হাস্সান বিন সাবিত, কা’ব বিন মালিক এবং আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা কাফিরদের বিরুদ্ধে কাব্য লড়াইয়ে নেমে পড়লেন।

 
একবার রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দীর্ঘ সফরে বের হয়েছেন। জনমানবহীন প্রান্তরে মরুপথে উটের পিঠে অবস্থান করছেন। রাতও হয়েছে বেশ, বললেন, হাস্সান কোথায়?’ হজরত হাস্সান (রা.) এগিয়ে এসে বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ এই তো আমি।’ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমাদের কিছু ‘হুদা’ শোনাও তো? শুরু করলেন কবি। ওদিকে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মন দিয়ে শুনছেন এবং উট চলছে অধিকতর ক্ষিপ্রতায়। উটের দ্রুত চলার কারণে মনে হচ্ছে হাওদা যেন পিছন দিকে ভেঙে পড়ে যাবে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাস্সানকে থামতে বলে মন্তব্য করলেন, ‘কবিতাকে এ জন্যই বলা হয় বিদ্যুতের চেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন এবং এর আঘাত শেলের আঘাতের চেয়েও ক্ষিপ্র ও ভয়ানক।’

রাসূল (সা.) এর উৎসাহ ও প্রেরণায় সাহাবীদের মধ্যে যাদের কাব্যচর্চার প্রতিভা ছিল তারা প্রায় সকলেই কাব্যচর্চা করতেন। সাহাবী কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন, হাস্সান বিন সাবিত (রা.), কা’ব বিন মালিক (রা.), আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রা.), আলী ইবনে আবু তালিব, আবু বকর সিদ্দিক (রা.), ওমর ফারুক (রা.), লবীদ বিন রাবিয়াহ (রা.), কাৎব ইবনে যুহাযের (রা.), আব্বাস বিন মিরদাস (রা.), যুহায়ের বিন জুনাব (রা.), সুহায়েম (রা.) ও আবু লায়লা (রা.) প্রমুখ।

রাসূলে আরাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবী কবিদের মধ্যে থেকে কবি হাস্সান বিন সাবিতকে সভাকবির মর্যাদা দিয়েছিলেন। তাকে বলা হতো শায়েরুর রাসূল বা রাসূলের কবি। অতএব, যারা কবিতার নিন্দা করে ও সত্য ন্যায়ের কবিদের ঘৃণা করে তারা মানবতার কলঙ্ক ও অভিশাপ ছাড়া কিছু নয়।

সাপ্তাহিক আজকাল
সাপ্তাহিক আজকাল
এই বিভাগের আরো খবর