মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৯ ১৪৩২   ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

সর্বশেষ:
মার্কিন যুদ্ধবিমানের ওপর উপসাগরীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে মার্কিন কংগ্রেসে বিল উত্থাপন ইরান-ইয়েমেনের কাছাকাছি পারমাণবিক বোমারু বিমান মোতায়েন কফিতে মশগুল ব্রিটেনে পলাতক সাবেক মন্ত্রীরা! নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে বাংলাদেশের ভুল চিত্র তুলে ধরেছে ভূমিকম্পে ১৭০ প্রিয়জন হারালেন এক ইমাম ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪২ ফিলিস্তিনি নিহত ট্রাম্প কি আসলেই তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন লিবিয়ায় অপহৃত ২৩ বাংলাদেশি উদ্ধার দুদিনে নিহত ১৩, চট্টগ্রামের জাঙ্গালিয়া যেভাবে মরণফাঁদ হয়ে উঠলো বাংলাদেশের অর্থপাচার তদন্তে ব্রিটিশ এমপিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা ভেনিজুয়েলার তেল-গ্যাস কিনলেই শুল্কারোপের হুমকি ট্রাম্পের সাভারে চলন্ত বাসে আবার ডাকাতি, চালক ও সহকারী আটক ছুটিতে এটিএম সেবা সবসময় চালু রাখার নির্দেশ উসকানিতে প্রভাবিত না হতে বললেন সেনাপ্রধান রেড ফ্ল্যাগ সতর্কতার আওতায় ২৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ এনসিপি নেতা হান্নানের পথসভায় হামলা, আহত ‘অর্ধশতাধিক’ নির্বাচনী ট্রেনে বাংলাদেশ বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্র্রঙ্কসের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত সাবওয়ে ট্রেনে সন্তান প্রসব নিউইয়র্কে আইস পুলিশের বিশাল অফিস উদ্বোধন মেয়রের মামলা প্রত্যাহারে প্রসিকিউটরের পদত্যাগ হাসিনা নিজেই হত্যার নির্দেশদাতা জন্ম নাগরিকত্ব বাতিল আদেশ আটকে দিল আদালতে নিউইয়র্কে ডিমের ডজন ১২ ডলার নিউইয়র্কে ভালোবাসা দিবস উৎযাপন আমেরিকান বাংলাদেশী টেক কোয়ালিশন’র আত্মপ্রকাশ জামালপুর সমিতির সভাপতি সিদ্দিক ও সম্পাদক জাস্টিস শেখ হাসিনার আমলে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বাংলাদেশিদের অস্ত্রোপচার বাতিলে কলকাতাজুড়ে হাসপাতালে হাহাকার দি‌ল্লি যাওয়া ছাড়াই পাওয়া যাবে মে‌ক্সি‌কান ভিসা বাজার থেকে উধাও বোতলজাত সয়াবিন কেউ আপনার স্ত্রীকে ‘হট’ বললে সেটা কি ভালো লাগে, প্রশ্ন সানার পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে এবাদুলের মিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হংকং-দুবাইয়ে পাচারকারীরা বেপরোয়া ছিল শেখ পরিবারের প্রশ্রয়ে সোনার দাম দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য কতটুকু সত্য? দিনে মাত্র একবেলা খাচ্ছে গাজার অনেক মানুষ পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে বদলে দেয়া হয় মেট্রোরেলের নিয়োগবিধি যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে দৈনিক ১৩৯ কোটি টাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নজর চার খাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন হাথুরুসিংহের অপকর্ম ধামাচাপা দেন পাপন ‘ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ আমেরিকার জন্য বিশাল হুমকি হবে’ নীরবে সরবে চাঁদাবাজি পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ ইন্টারনেট ছাড়াই গুগল ম্যাপ ব্যবহারের উপায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ বাইডেনের ভাড়া ফাঁকিবাজদের ধরতে চলছে সাঁড়াশি অভিযান সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরীকে গুলি করে মরদেহ নিয়ে গেল বিএসএফ ভিসা ফি ছাড়াই এবার পাকিস্তান যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাফি আটক সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয়বহুল সফরে ২৬ ব্যাংক এমডি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ সাবেক সেনাপ্রধান ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা দিনের বেলায় মরুভূমির চেয়েও উত্তপ্ত চাঁদ ডেঙ্গুতে একদিনে ১১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৩২৭ ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠির সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে ২৬৭ প্রবাসী বাংলাদেশি অক্টোবরের মধ্যেই ‘আন্দোলনের ফসল’ ঘরে তুলতে চায় বিএনপি শর্তসাপেক্ষে নিউইয়র্কে মসজিদে আজানের অনুমতি বাংলাদেশ থেকে বিনা খরচে মালয়েশিয়া গেলেন ৩১ কর্মী খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর নির্দেশ জার্মানে পাঁচ বছর বাস করলেই পাওয়া যাবে নাগরিকত্ব বিএনপি-জাপা বৈঠক সিঙ্গাপুরে বাইডেন প্রশাসনকে হাসিনার কড়া বার্তা এবার হাসিনার পাশে রাশিয়া বঙ্গ সম্মেলনের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা স্টুডেন্ট লোন মওকুফ প্রস্তাব বাতিল বাংলাদেশিদের ওপর উপর্যুপরি হামলা যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে নিজ দেশে মানবাধিকার রক্ষা করা: শেখ হাসিনা তামিমের অবসর অভিযোগের তীর পাপনের দিকে নিউইয়র্কে এখন চোরের উপদ্রুব যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে হাতিরঝিলের ক্ষতি হবেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি, পাঁচ দিনে নিহত ৩৫ যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটছে বাখমুত থেকে পিছু হটেছে সেনারা, স্বীকার করল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণ ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোন হবে না, দাবি আবহাওয়া অধিদপ্তরের সুদানে যুদ্ধে সাড়ে ৪ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত : জাতিসংঘ পারস্য উপসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাপি ঋণে দ্বিতীয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে সারা দেশে ভোগান্তি রুশ হামলা সামলে ফের বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে যাচ্ছে ইউক্রেন রিজার্ভ সংকট, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের দুর্বল নীতিও দায়ী পূজার ‘জিন’ একা দেখতে পারলেই মিলবে লাখ টাকা! সিরিয়ায় আর্টিলারি হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল বাইডেন না দাঁড়ালে প্রার্থী হবেন কে নাইজেরিয়ায় ৭৪ জনকে গুলি করে হত্যা ভারতে বাড়ছে করোনা, বিধিনিষেধ জারি তিন রাজ্যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুলা যে কোনো দিন খুলবে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল দেশে করোনার নতুন ধরন, সতর্কতা বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করবো: মাহিয়া মাহি মর্মান্তিক, মেয়েটিকে ১২ কিলোমিটার টেনে নিয়ে গেল ঘাতক গাড়ি! স্ট্যামফোর্ড-আশাসহ ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বর্ষবরণে বায়ু-শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যে ধাক্কা কোনো ভুল মানুষকে পাশে রাখতে চাই না বাসস্থানের চরম সংকটে নিউইয়র্কবাসী ট্রাকসেল লাইনে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত একাকার! ছুটি ৬ মাসের বেশি হলে কুয়েতের ভিসা বাতিল ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত চুক্তিতে বিয়ে করে ইউরোপে পাড়ি আইফোন ১৪ প্রোর ক্যামেরায় নতুন দুই সমস্যা পায়ের কিছু অংশ কাটা হলো গায়ক আকবরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০০ কোটি ডলার নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আবার বাড়লো স্বর্ণের দাম
৪২৪

বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাস

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

বাংলাদেশে তাবলীগে জামাতের গোড়াপত্তন ১৯৪৪ সালে। মহান কর্মবীর মাওলানা আব্দুল আজীজ (রহ.) এর হতে ধরে। সে বছর হতে প্রতিবছর বাংলাদেশে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই হিসাবে এবছরের ইজতেমার ৭২তম ইজতেমা। যদিও আনুষ্ঠানিক হিসাব মাত্রায় এবারের ইজতেমা ৫৩তম।

 

তাবলীগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলন এই বিশ্ব ইজতেমা। পৃথিবীব্যাপী আগামী বছরের মেহনতের রোডম্যাপ গ্রহণ করা হয়। ইজতেমায় অংশ নেন প্রতিটি জনপদের মুরুব্বী ও দায়িত্বশীলগণ। কাজের বিগত বছরের পর্যালোচনা আগামীর বছরের পরিকল্পনা, সাথীদের মজবুত হওয়া, নিজ নিজ এলাকা কাজ সৃষ্টি, দৈনিক দাওয়াত, সাপ্তাহিক গাসত, কীতাব তালীমসহ পাঁচ কাজ চালু করা। এছাড়াও খৃষ্টান প্রধান দেশগুলোতে দাওয়াতের পন্থা নির্ণয়, সম্ভাব্যতা যাচাই, কাজের ধরণ, মেহনতে বিকল্প পন্থা ব্যবহারসহ আশা, পরিকল্পনা, বাস্তবায়নের চমৎকার সব ইশতেহার ঘোষিত হয় বিশ্ব ইজতেমার মেম্বর হতে। তুরাগ তীরের এক্ষুদ্র স্থানটি আলোক বিভা ছড়িয়ে দেয় বিশ্বময়। 

ইতিহাসের আলোক ধারায় সূর্য উজ্জ্বল এ তাবলীগ জামাত, একাজের উদ্ভোধনী সূচনা করেছেন নবী আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম। পরবর্তিতে তার আশেকীনগণ স্থান কাল পাত্র ভেদে এই কাজের আঞ্চলিক, সেক্টরভিত্তিক, মানুষভিত্তিক কাজের বিভিন্ন রূপায়ণ করেন। সেই ধারাবাহিকতায় মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ১৯১০ সালে সাধারণ তুলনামূলক ধর্মীয় জ্ঞানশূন্য এমন মানুষদের দ্বীনের ফরজিয়্যাত আমলে আনার দাওয়াত দেন। হজরত ইলিয়াস (রহ.) ছিলেন দেওবন্দের ছাত্র। জ্ঞানে গুণে ইলমে আমলে পরিপক্ক আলেম ছিলেন। 

 

১৯১০ সালে আজকের কাজের মতো এতো সুশৃঙ্খলা ছিলো না তাবলিগ। কাজ করতে করতে পরের ১৫/১৬ বছরে মাথায় সুন্দর কাঠামো বা ট্রাকচার গঠিত হয়। তবে লিখিত সাংবিধানিক কোনো আকারে না। বরং মুখে মুখে শোনে শোনে আমলে এনে কাজে সুন্দর রূপ ও আকর্ষণীয় সম্যতাবোধে সৃষ্টি হয়। ভারতের সাহারানপুর অত্যস্ত দুর্বল অবস্থায় তাবলীগী কাজের বীজ অঙ্কুরিত হয়ে তা পত্র পল্লবে ছড়িয়ে আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত বিশাল মহীরুহ। বিশ্বে এমন কোনো দেশ হয়তো পাওয়া যাবে না, যেখানে মানুষ আছে অথচ তাবলীগ আন্দোলনের কাজ নেই। ভারতবর্ষের মুসলমানদের ইতিহাসের এক ক্রান্তিকালে তাবলীগ জামাতের শুভ সূচনা হয়। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী দিল্লির দক্ষিণ পার্শ্বস্থ এক নীরব অঞ্চল মেওয়াত। চারিত্রিক বিপর্যস্ত ধর্ম কর্মহীন নামমাত্র মুসলমান জনগোষ্ঠীকে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস, ধর্মের পূর্ণাঙ্ক অনুশীলন ও কালেমার মর্ম শিক্ষা দান এবং গোমরাহীর কবল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে হজরতজী মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) এর তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম শুরু করেন। মেওয়াতীদেও মাঝে আরব জাহেলিয়াতের ছড়াছড়ি অনুভব করে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) সংস্কারের উদ্যোগ নেন এবং তাদের নৈতিক অবস্থার পরিবর্তনে দৃঢ়সঙ্কল্পবদ্ধ হন। সেখানকার শিশু কিশোরদের ধর্মীয় শিক্ষাদানের জন্যে সেখানে তিনি কয়েকটি মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন। 

মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) অনুধাবন করেন যে, সমাজের বৃহত্তর অংশে ইসলামের সমাজের মৌলিক বিশ্বাস দৃঢ়করণ ও তার বাস্তব অনুশীলন না হলে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয় এবং সাধারণ মানুষের জীবনে দ্বীন না আসলে কিছুই হতে পারে না। ১৩৪৫ হিজরীতে হজ থেকে ফিরে এসে তিনি তাবলীগি গাসত শুরু করেন। জনসাধারণের মাঝে দাওয়াত দিতে লাগলেন কালেমা ও নামাজের। লোকজনকে তাবলীগ জামাত বানিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বের হওয়ার দাওয়াত দিলেন। মেওয়াতে কয়েক বছর এ পদ্ধতিতেই কাজ অব্যাহত ছিলে। ১৩৫২ হিজরীতে হজ পালনের পর ইলিয়াস (রহ.) বুঝতে পারলেন যে, গরীব মেওয়াতী কৃষকের পক্ষে দ্বীন শেখার সময় বের করা কষ্টকর। তাই তিনি একমাত্র উপায় হিসেবে তাদের ছোট ছোট জামাত আকারে ইলমী ও দ্বীনি মাকাজগুলোতে গিয়ে সময় কাটানোর জন্যে উদ্ব্দ্ধু করেন। মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) এর জীবদ্দশাতেই বার্ষিক ইজতেমা অনুষ্ঠানের কাজ শুরু হয়। উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ও উপমহাদেশের বাইরেও নানা দেশে তাবলীগের কাজ বিস্তৃত করার উদ্যোগ মাওলানা নিজেই গ্রহণ করেন। তার নির্দেশে উপমহাদেশের বড় বড় শহরে তাবলীগের জামাত সফর শুরু করে। 

ইতিহাসের বর্ণাঢ্য আয়োজন:

প্রায় তিপ্পান্ন বছর যাবত টঙ্গিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। এরই পূর্বে ঢাকার কাকরাইল মসজিদ সংলগ্ন রমনা উদ্যানের একাংশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইজতেমা। ইজতেমার ইতিহাস মন্থনে জানা যায়, বাংলাদেশে ইজতেমা অনুষ্ঠানের প্রায় ৩/৪ যুগ পূর্বে ভারতের মাহারানপুর এলাকায় এ মহতী কাজের জন্মস্থান ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারিত ছিল না। একাজের জন্ম ‍ভূমি সাহারানপুর জেলার মেওয়াতে একাধিকবার ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কাজের গতি, কাজের সাথীদের উপস্থিত ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বে অনুষ্ঠিত হওয়ার স্থান বলা যেত না। তিন দিন থাকা, খাওয়া, রান্না-বান্না, গোসল, পায়খানা, প্রস্রাব একটি জটিল বিষয়। তাই স্থান নির্ধারণ নিয়ে মুরুব্বীদের সমস্যা পোহাতে হতো। ইতিহাসে পাওয়া যায় হজরত ইলিয়াস (রহ.) যখন মানুষের কাছে ধর্মীয় প্রচার শুরু করেন, তখন তেমন কোনো সাড়া মিলেনি। তাই তিনি অভিনব এক কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি আশপাশের দিনমজুর শ্রমিক কৃষকদেও ডেকে এনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রেখে দুবেলা খাবার দিতেন নিজ খরচে। এবং তাদেরকে নামাজ শিক্ষা দিতেন, নামাজের সূরা শিখাতেন, ধর্মীয় বিধি-নিষেধ বর্ণনা করতেন। অবশেষে বিদায় বেলা তাদের প্রত্যেককে মজুরি তথা পারিশ্রমিক দিয়ে দিতেন। পদ্ধতি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হলো। অল্প সময়ের ব্যবধানেই তার নামাজের আন্দোলনের সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হয়ে পড়লো। জনগণ নিজেরাই নিজ অর্থ ব্যয় করে ইলিয়াস (রহ.) এর পদাঙ্ক অনুকরণ করে দাওয়াতী কার্যক্রম চালাতে থাকেন। 

বাংলাদেশর প্রথমদিকের ইজতেমাগুলো নিম্নবর্ণিত স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার কাকরাইল মসজিদে ১৯৫৪ সালে। এটাই বাংলদেশের প্রথম ইজতিমা। ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ১৯৬৫ সালে টংঙ্গীর তুরাগ পাড়ে। তখন থেকে এগুতে এগুতে আজকের টংঙ্গীতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমা। আজ সে ইজতেমায় অংশগ্রহণ করে বিশ্বের দেড়শতাধিক দেশের জনগণ। শিল্পনগরীতে স্থায়ী ভাবে ইজতেমা স্থানান্তরিত করা হয় ১৯৬৬ সালে আর সে বছর থেকেই তাবলীগ জামাতের এই মহাসম্মেলন ‘বিশ্ব ইজতেমার’ নামে খ্যাতি অর্জন করে। মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহত্তর সম্মেলন হজে যেমন বিশ্বে এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তের মুসলমানদের সম্প্রীতি, সৌহাদ্য আর ঐক্যের প্রেরণায় অভাবনীয় নজির দেখা যায়। আজকের বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমায়ও দেখা যায় মুসলিম ঐক্যের এক অপূর্ব মিলনমেলা। এ যে ঈমানের মিলনমেলা, দ্বীন শিখার খেলা।
 
বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় তিনদিন ব্যাপী। বর্তমানে দু’বছরে দু’পর্বে মোট ছয়দিন। কিন্তু টংঙ্গীতে আমেজ থাকে মাসখানেক। ইজতেমার প্রস্তুতি তো ৩/৪ মাস আগ থেকেই শুরু হয়ে যায় আর ঠিক ইজতেমার আগেই সম্পন্ন হয়ে যায়। সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত ইসলামী আন্দোলন বলা যায় তাবলীগের এই নীরব কার্যক্রমকে। পৃথিবীর ছয়টি মহাদেশের কোটি কোটি মুসলমান এ আন্দোলনে সময় শ্রম ও অর্থ সম্পদ ব্যায় করে স্বত:স্ফূর্ততার সঙ্গে। 

 

আশ্চর্যের খবর: (১) ইজতেমা নিয়ন্ত্রণকারী তাবলীগ জামাতের কোনা সংবিধান নেই। অলিখিত সংবিধানও নেই। লিখিন আইন, বিধি-বিধান ও উপবিধি কিছুই নেই। সর্ব বিষয় নির্ধারণ, চালিত ও গৃহিত মাশওয়ার ভিত্তিতে। তারপরও এ আন্দোলন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং সুশৃঙ্খল আন্দোলন। তাবলীগ জামাতের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি আছে। এটিকে বলা হয়ে মজলিসে শুরা। এ কেন্দ্রীয় কমিটি কোনো আনুষ্ঠানিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না ২১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও বহু ব্যক্তি এ কমিটির মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাবলীগে যার অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগিয়েছে তারাই এ কমিটির আলোচনায় কথাবার্তা বলেন। তাবলীগ আন্দোলনে ক্ষমতা বা পদমর্যাদার কোনো প্রতিযোগিতা নেই, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। নেতৃত্বেও কোন্দল নেই, ষড়যন্ত্র নেই। তাবলীগ  অনুসারীরা তাদের আমিরকে সম্বোধন করেন হজরতজী বলে। 

(২) বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে কোনো চাঁদা অনুদার করো কাছ থেকে চাওয়া হয় না। স্বেচ্ছাসেবীরা স্বত:স্ফূর্ত হয়ে এ সম্মেলনের ব্যয়ভার বহন করে থাকেন। তাবলীগে অংশগ্রহণকারী প্রকৌশলীগণ প্যান্ডেলের একটি নকশা তৈরি করে দেন। বিভিন্ন কল কারখানা মিল ফ্যাক্টরি থেকে আসে লোকজন রড সিআই সিট। সামিয়ানার চট নিয়ে আসেন নিজ উদ্যোগেই। কে কী জিনিস নিয়ে আসে, তা যার হিসেব তারই রাখে। ইজতেমা শেষ হওয়ার পর তার স্ব স্ব জিনিসপত্র খুলে নিয়ে যান। 

 

(৩) তাবলীগি কার্যক্রম ও বিশ্ব ইজতেমার কোনো প্রেস রিলিজ, প্রকাশনা ও প্রচার শাখা নেই। বিশ্ব ইজতেমা কোনো তারিখে অনুষ্ঠিত হবে তা উল্লেখ করে কোনো প্রেস বিজ্ঞপ্তি ইস্যু করা হয় না। কোনো লিফলেট পোস্টার ছাপানো হয় না। তবুও লাখ লাখ মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মাঠে সমবেত হন। ইজতেমা ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে কে বক্তব্য রাখছেন, তার নাম ঘোষণা করা হয় না। এ ক্ষেত্রে তাবলীগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বলেছে সে দিকে তাকিও না কী বলেছে সে দিকে তাকিও না নীতির উপর চলে। যার কারণে অহমিকা অহঙ্কার অহংবোধ আর নিজকে প্রাধান্য দেয়ার মানসিকতা তৈরি হয় না।

(৪) চিকিৎসা: দৈনিক তিন শিফটে ডাক্তারগণ জরুরি সেবা প্রদানের লক্ষে কাজ করেন। এদের সবাই তাবলীগের সাথী। টঙ্গী হাসপাতালের সঙ্গে এরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ। এদের একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আরেকজন ফার্মাসিস্ট। অন্যজন সহকারী ডাক্তার। ইজতেমার জন্য একাধিক এ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্টবাই রাখা হয়। এদের পাশাপাশি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ টিম, সালাউদ্দীন হাসপাতাল টিমসহ বহু হাসপাতালের দক্ষ কর্মীগণ উপস্থিত থাকেন। ইজতেমার কাজ পরিচালনার জন্য অধিক গাড়ি রিজার্ভ রাখা হয়। 
 
(৫) ইজতেমার অনাড়ম্বর যে সব আয়োজন: অনুমান করা যায় ২০ হাজার বিদেশি মেহমান অংশ নিচ্ছেন এবারের ইজতেমায় এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্তত ১১৫টি দেশের তাবলীগ জামাতের প্রায় ২০ হাজার বিদেশি মেহমান অংশ নিচ্ছেন বলে আশা করা যায়। এদের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক মেহমান আগমন করবেন। এবারের প্রথমপর্বরে ইজতেমায় যেসব দেশ অংশ গ্রহণ করবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, সুইডেন, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, নরওয়ে, মালদ্বীপ, ইন্দোনিশিয়া, মালয়েশিয়া, মিসর, শ্রীলংকা, কাতার, ইরান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, জর্দান, মরোক্কে, ওমান, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, তিউনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন, জার্মানী, কানাডা, হংকং, আলজেরিয়া, কেনিয়া, বাহরাই, জাম্বিয়া, তুরুস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ইটালী, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, অস্টেলিয়া প্রভৃতি। এসব দেশের মেহমানদের অধিকাংশ দ্বিতীয়পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রণ করতে ময়দানের আন্তর্জাতিক নিবাসে অবস্থান করবেন বলে ইজতেমা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সাপ্তাহিক আজকাল
সাপ্তাহিক আজকাল
এই বিভাগের আরো খবর